আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন ও ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যশোরের বেনাপোল ও শার্শায় ৯৩ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো শহীদ মিনার নেই। অথচ সরকারিভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন করার নির্দেশ থাকলেও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।
১৯৯৯ সালে শহীদ দিবস ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকেই প্রতিবছর সারাবিশ্বে দিবসটি পালিত হয় । তবে শার্শায় মাতৃভাষা দিবসটি পালিত হয় দায়সারাভাবে। কলেজ, হাইস্কুল, মাদরাসা ও প্রাইমারি স্কুলগুলোতে দিবসটি পালিত হয় দোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। তৃণমূল পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার গড়ে না ওঠায় গুরুত্ব হারাচ্ছে দিবসটি। শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে। ফলে নানা ক্ষোভ বিরাজ করছে ভাষাপ্রেমী মানুষের মধ্যে।
বেনাপোলের গাতিপাড়া সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ইজ্জত আলী বলেন, ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্য যারা শহীদ হয়েছিল তাদের স্মরণে আজও শার্শা উপজেলায় ৯৩ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো শহীদ মিনার গড়ে না ওঠায় শিক্ষার্থীরা ভষা শহীদদের শ্রদ্ধা ও স্মরণ করতে পারে না।
বেনাপোলের সিনিয়র মাদরাসার সুপার মো. ইলিয়াস হুসাইন বলেন, ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারি। ভাষার জন্যে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণ করতে পারেন না অনেকে। মাদরাসাগুলোতে গড়ে ওঠেনি কোনো শহীদ মিনার। এ ব্যাপারে সরকারের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।
শার্শা ও বেনাপোলে রয়েছে প্রায় তিনশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ১২৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার আছে ১৪টিতে। ৩৪টি হাইস্কুল ও ১২টি কলেজের মধ্যে ২২টিতে শহীদ মিনার আছে। ৩৩ টি মাদরাসার একটিতেও কোনো শহীদ মিনার নেই। তবে বেনাপোল, শার্শা, নাভারন ও বাগআঁচড়া হাইস্কুলের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান কয়েকটি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনসহ কোনো ব্যক্তি উদ্যোগে গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ না হওয়ায় ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারেন না শিক্ষার্থীরাসহ এলাকার মানুষ।
শহীদ মিনার নির্মাণসহ ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর আহ্বান জানিয়ে বেনাপোল ও শার্শার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানায়, সব প্রতিষ্ঠানে যদি শহীদ মিনার থাকতো তাহলে ভাষার গুরুত্ব ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা, দোয়া, আলোচনা সভা ছড়িয়ে পড়তো সবার মাঝে।
শার্শা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ১২৬টি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১২টিতে কোনো শহীদ মিনার নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ দরকার।
শার্শা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, উপজেলার ১২টি কলেজ ও ৩৪টি হাইস্কুল, ৩৩টি মাদ্রাসা এবং অসংখ্য কিন্ডার গার্টেনের মধ্যে মাত্র ২২টিতে শহীদ মিনার আছে। কিন্তু কোনো মাদরাসা ও কিন্ডার গার্টেনে শহীদ মিনার গড়ে ওঠেনি। তৃণমূল পর্যায়ে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের গুরুত্ব ছড়িয়ে দিতে বা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা প্রয়োজন।
তবে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শার্শা ও বেনাপোলের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করার দাবি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সর্বস্তরের মানুষের।