আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। সবখানে ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ুক। হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে সবাই ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হোক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিবসকে সামনে রেখে আয়োজনের কোনো কমতি ছিল না। প্রতি বছরের মতো এবারও নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে দিবসটি। কোথায় কিভাবে ভালোবাসা দিবস পালিত হয় এক নজরে দেখে নিন।
কানাডা
কানাডায় ভালোবাসার বিশেষ দিনটি বেশ উৎসাহের সঙ্গে পালিত হয়। সারা দেশে বল ড্যান্স এবং পার্টি থাকে। এদিন স্বামী-স্ত্রীকে, স্ত্রী-স্বামীকে, প্রিয়জন-প্রিয়জনকে ভালোবাসার কথা জানায়। গোলাপের প্রাধান্যই এখানে বেশি থাকে। এরপর চকোলেট, কার্ড, গিফটতো আছেই।
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ায় অনেকটা একই ধাঁচে উপহারের আদান-প্রদান হয়। এক জরিপে দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার ছেলেরা ভালোবাসার ক্ষেত্রে মেয়েদের চেয়ে অনেক বেশি উদার। এ দিন উপলক্ষেও ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় অনেক বেশি উপহার কেনেন।
আমেরিকা
১৯ শতাব্দীতে আমেরিকায় প্রথম ভালোবাসা দিবস ধারণাটির জন্ম হয়। ১৮৪৭ সালে পুরো দেশে ভালোবাসা দিবস পালিত হয়। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে কার্ড এবং গোলাপই ছিল ভ্যালেন্টাইনস ডের মূল উপহার। ১৯৮০ সালের দিকে ডায়মন্ড কোম্পানিগুলো ভ্যালেন্টাইনস ডে প্রমোট করা শুরু করে। সেই থেকে জুয়েলারি চলে আসে প্রচলিত গিফটের তালিকায়।
এস্তোনিয়া
বিশ্বের নানা দেশের মতোই এস্তোনিয়াতে ১৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হয়। তবে সেখানে তা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য জন্য। এ দিনটিতে সেখানে মূলত বন্ধুরা একে অন্যকে তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করে। এতে তা শুধু ভালোবাসা দিবস নয় বরং বন্ধুত্ব দিবসে পরিণত হয়। এমনকি পরিবারের সদস্যরাও একে অন্যকে তাদের শুভেচ্ছা জানায়।
ডেনমার্ক
ডেনমার্কে আগে ভ্যালেন্টাইন্স ডেতে প্রেয়জনকে লাল গোলাপ নয় বর সাদা ফুল দিয়ে এদিন শুভেচ্ছা জানানো হয়। অনেকেই তার মনের মানুষকে একটি বেনামি চিঠি পাঠায়, যেখানে তারা কোনো মজার কবিতা বা রোমান্টিক বাণী লিখে দেয়। এ উপহার গ্রহীতা যদি সঠিকভাবে প্রেরককে খুঁজে পায় তাহলে তারা বছরের পরবর্তী সময়ে ইস্টার এগ বিনিময়ের প্রতিজ্ঞা করে।
ঘানা
ঘানায় ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালিত হয় অন্য দেশগুলোর তুলনায় ভিন্নভাবে। দেশটিতে প্রচুর চকলেট উৎপাদিত হয়। এ কারণে অধিবাসীরা চকলেটকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে এ দিনটি পালন করে। ভ্যালেন্টাইন্স ডেতে তারা একে অন্যকে চকলেট উপহার দেয়। ২০০৭ সাল থেকে দেশটিতে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় চকলেট দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।
ফিলিপাইন
ভ্যালেন্টাইন্স ডে ফিলিপাইনে পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় ভিন্নভাবে পালিত হয়। এ দিনটিতে সেখানে অসংখ্য জুটি বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে গণবিবাহের প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে। আর এ কারণে ১৪ ফেব্রুয়ারিকেই বহু মানুষ বিয়ের জন্য বেছে নেয়। এভাবেই তারা ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন করে।
ব্রিটেন
ভালোবাসা দিবস ভ্যালেন্টাইনস ডে ব্রিটেনের উল্লাস একটু বেশি থাকে। বলা হয়ে থাকে, ভ্যালেন্টাইনস ডেতে ব্রিটেন এবং ইতালির অবিবাহিত মেয়েরা সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠত। তারা বিশ্বাস করত, সূর্যোদয়ের পর প্রথম যে পুরুষকে তারা দেখবে সে অথবা তার মতোই কোনো পুরুষ এক বছরের মধ্যে তাদের জীবনসঙ্গী হবে। এ ছাড়া অবিবাহিত মেয়েরা কাগজে পছন্দের ছেলের নাম লিখত। সেই কাগজ মাটির বলে পেঁচিয়ে পানিতে ফেলত। যে নামের কাগজ সবার আগে ভেসে উঠত, ধারণা করা হতো তার সঙ্গেই বিয়ে হবে মেয়েটির।
ফ্রান্স
ব্রিটেনের মতো ফ্রান্সের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে ভ্যালেন্টাইনস ডের জন্মকথা। তাই এখানেও উৎসাহ থাকে অনেক। ভালোবাসা দিবসে কার্ড উপহারের প্রথা শুরু হয়েছে ফ্রান্স থেকে। চার্লস নামের এক ব্যক্তি প্রথম ভ্যালেন্টাইনস কার্ড লেখেন। অভিজাত কার্ডে উপহার রীতি রয়েছে এখানে। কার্ড ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের গিফট আদান প্রদানের রীতি রয়েছে এখানে।
চীন
চীনাদের নিজ সংস্কৃতিতে ভালোবাসার জন্য আলাদা একটি দিন আছে। চায়নিজ ক্যালেন্ডারে সপ্তম চান্দ্র মাসের সপ্তম দিনে থাকে এই বিশেষ দিনটি। দিনটিকে বলা হয় কী জি। অথবা ‘দ্য নাইট অব সেভেনস’। গতানুগতিক ভ্যালেন্টাইনস ডে থেকে দিনটি অনেক আলাদা। এই দিনকে কেন্দ্র করে ফুল ছাড়াও চকোলেট, কার্ড আদান-প্রদানও চলে।
ভারত
ভারতে ভালোবাসা দিবস নিয়ে নানা ধরনের আয়োজন থাকে। নানা ধরনের গিফটের মাধ্যমে ভালোবাসার আদান প্রদান হয়। শুধু প্রেমিক নয় বাবা-মা, ভাইবোন, বন্ধুদেরও ভালোবাসা জানানো হয় এই দিনে।
বাংলাদেশ
বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইনস ডে পালিত হচ্ছে নব্বইয়ের দশক থেকে। এখানে ফুল, কার্ড এবং বিভিন্ন ধরনের গিফট দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এই দিনটিতে কেন্দ্র করে ফুল এবং গিফটের দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভিড় থাকে। অন্যান্য দিবসগুলোর মতো ভ্যালেন্টাইনস ডে আনন্দ আর উচ্ছ্বাস বয়ে আনে। ছুটির দিন না থাকলেও এই দিনে সবখানেই বিশেষ আয়োজন থাকে। অনেকেই প্রিয়জনকে ভালোবাসা প্রকাশের জন্য এই দিনটিকেই বেছে নেয়।