স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী পিরোজপুরের কৃতী সন্তান ক্ষমা দাশ গুপ্তা (৬৮) আর নেই। রোববার রাতে তার বড় মেয়ের নরসিংদীর বাড়িতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি পরলোকগমন করেন। তিনি দুই কন্যাসন্তানের জননী ছিলেন।
ক্ষমা দাশ গুপ্তা পিরোজপুর শহরে মাছিমপুর সড়কে বাস করতেন। তার হঠাৎ মৃত্যুতে পিরোজপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার দুই মেয়ের একান্ত ইচ্ছায় রাতেই নরসিংদীতে তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়।
একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র (কালিগঞ্জ, কোলকাতা) থেকে প্রচারিত ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল রক্ত লাল’ গানের অন্যতম শিল্পী ক্ষমা দাশ গুপ্তা।
ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুথানে গণসংগীতের মাধ্যমে ভূমিকা রেখেছেন দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে। সে সময় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান গেয়ে মানুষের মনে জাগিয়েছেন এক দুরন্ত সাহস আর বেঁচে থাকার স্বপ্ন। স্বাধীনতাত্তোর ১৯৭৪ সালের বন্যায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। হাটে-মাঠে গান গেয়ে সাহায্য সংগ্রহ করেছেন।
এ গুণী শিল্পী ১৯৪৯ সালের ৩১ অক্টোবর পিরোজপুর শহরের মাছিমপুর সড়কে একটি প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম প্রয়াত সুরেন্দ্র নাথ দাশ গুপ্ত, মা প্রয়াত পারুল বালা দাশ গুপ্তা। তার স্বামী প্রয়াত কালিদাস সাহা।
তিনি ১৯৬৬ সালে পিরোজপুর আরবান গার্লস স্কুল (বর্তমান সরকারি বালিকা বিদ্যালয়) থেকে এসএসসি, ১৯৬৯ সালে পিরোজপুর সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৭৬ সালে বিএ পাশ করেন। পেশাগত জীবনে তিনি একজন সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন।
১৯৭২ সাল থেকে প্রায় ২০ বছর খুলনা, বরিশাল বেতার ও টেলিভিশনে নিয়মিত শিল্পী হিসাবে সংগীত পরিবেশন করেন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী পিরোজপুর জেলা শাখা তাকে গুণী শিল্পীর সম্মাননায় ভূষিত করেন।
২০১২ সালে স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা সিডিআই নেটওয়ার্ক জীবনব্যাপী সংগীতে অবদানের জন্য সফল নারী সন্মাননা প্রদান করে। ২০১৩ সালে তাকে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর পক্ষ থেকে জেলার শ্রেষ্ঠ সংগীত শিল্পীর সন্মাননা প্রদান করা হয়।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন জেলা উদীচীর সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ মান্নান, সাধারণ সম্পাদক খালিদ আবু, পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান খালেক, মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সালমা রহমান হেপি এবং শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আহসান গাজী।