হায়দরাবাদ টেস্ট আর যাই হোক, পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে। শুরুতে যেভাবে ভারত রান উৎসব করেছে। আবার এখানকার উইকেটয যেভাবে ভাঙতে শুরু করে দু’দিন কিংবা তিন দিন পর থেকে, তাতে অনেকেই ধরে নিয়েছিল টেস্ট ম্যাচটা বড় জোর চতুর্থ দিন লাঞ্চ পর্যন্ত গড়াবে; কিন্তু মুশফিক বাহিনী দেখিয়ে দিয়েছে, তারাও টেস্ট খেলতে পারে। ভারতের সামনে তাদেরই মাটিতে বুক চিতিয়ে লড়াই করতে জানে। ডাবল সেঞ্চুরির জবাব সেঞ্চুরি দিয়ে হলেও করতে জানে।
তবুও ভারত বিশ্বের এক নম্বর দল। নিজেদের মাঠে কিছুদিন আগেও ইংল্যান্ডকে ইনিংস ব্যবধানে হারানোর রেকর্ড আছে তাদের। এই টেস্টেও হয়তো জয় পাবে বিরাট কোহলিরা। কারণ, বাংলাদেশকে জিততে হলে রেকর্ডই গড়তে হবে। ৪৫৯ রান তাড়া করে যে চতুর্থ ইনিংসে এখনও কেউ জিততে পারেনি! আবার চতুর্থ দিন শেষ বিকেলের পর পঞ্চম দিনের প্রথম সেশন শেষ হওয়ার আগেই আক্ষরিক অর্থেই ব্যাকফুটে বাংলাদেশ। হাতে আছে আর ৫ উইকেট। রান লাগবে আরও ২৬৬। উইকেটে সাব্বির আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ব্যাট করতে হবে আরও ৬০ ওভার।
চতুর্থ দিন লাঞ্চ থেকে চা বিরতি পর্যন্ত এক সেশন ব্যাট করেই আবার বাংলাদেশকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ৪৫৯ রান করার জন্য বাংলাদেশের সামনে সুযোগও রেখে দিয়েছেন। চারটি সেশন, ১২৫ ওভার খেলতে হবে। জয় না হোক, অন্তত ড্র তো করা যায়। ১২৫ ওভার খেলা যদিও চাট্টিখানি কথা নয়; কিন্তু চতুর্থ ইনিংসে যে বাংলাদেশকে এবারই এতগুলো ওভার খেলতে হবে তা নয়। চতুর্থ ইনিংসে এর চেয়েও ঢের বেশি ওভার খেলার অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশের।
চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ১৪২ ওভার খেলার রেকর্ড রয়েছে টাইগারদের। ২০০৫ সালে সেই ঐতিহাসিক সিরিজের কথা। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে। চট্টগ্রামে আগের টেস্টেই নিজেদের ইতিহাসে প্রথম জয়ের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছে ২২৬ রানে। দ্বিতীয় টেস্ট ঢাকায়। শুধু ম্যাচ জয় নয়, বাংলাদেশের লক্ষ্য তখন যেভাবেই হোক সিরিজ জয়। এ কারণে ঢাকা টেস্ট ড্র করলেও চলবে।
কিন্তু ঢাকায় প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়েকে ২৯৮ রানে অলআউট করে দেয়ার পর নিজেরাও অলআউট ২১১ রানে। ৮৭ রানের লিড নিয়ে জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে। তাতেন্দা তাইবুর সেঞ্চুরিতে এবার তারা করে ২৮৬ রান। ফলে বাংলাদেশের সামনে জয়ের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৭৪ রানের। হাতে প্রায় পুরো পাঁচটা সেশন বাকি। চতুর্থ ইনিংসে ৩৭৪ রান তাড়া করা তখন বাংলাদেশের জন্য রীতিমত স্বপ্নের ব্যাপার।
কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে উইকেটে পড়ে থাকার ফন্দিই যেন আঁটলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার জাভেদ ওমর বেলিম আর নাফিস ইকবাল। দু’জন মিলে গড়েন ১৩৩ রানের জুটি। কিন্তু কাটিয়ে দিয়েছেন ৮৩টি ওভার। জাভেদ ওমর ৩৪০ মিনিট উইকেটে কাটিয়ে খেলেছেন ২৫৮ বল। রান করেছেন মাত্র ৪৩টি। নাফিস ইকবাল উইকেটে কাটিয়েছেন ৪৭০ মিনিট এবং ৩৫৫ বল। সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। আউট হয়েছেন ১২১ রান করে।
এ দু’জনের দেখানো পথে হেঁটেছে পরের ব্যাটসম্যানরাও। অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন ৪৭ মিনিট উইকেটে কাটিয়ে ২৯ বল খেলে রান করেছেন মাত্র ২টি। মোহাম্মদ আশরাফুল মাত্র ৩ বলে ৩ রান করে আউট হলেও রাজিন সালেহ আর খালেদ মাসুদ পাইলট মাটি কামড়ে পড়ে থেকে শেষ পর্যন্ত টেস্টটা ড্র করে আসলেন। ১৪০ বল খেলে ৫৬ রানে অপরাজিত থাকেন রাজিন সালেহ আর ৫৭ বল খেলে ২৮ রানে অপরাজিত থাকেন পাইলট। ১৪২ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ করেছিল ২৮৫ রান। মরণপন লড়াই শেষে বাংলাদেশ জিতেছিল সেই টেস্ট সিরিজটি।
চতুর্থ ইনিংসে আর একবার ১২৫ ওভারের বেশি খেলেছে বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে ডিসেম্বরে ঢাকায় শ্রীলংকার বিপক্ষে খেলেছিল ১২৬.২ ওভার। যদিও ওই টেস্টে ১০৭ রানে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১০ সালে চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে ১২৪ ওভার খেলেছিল বাংলাদেশ। ওই ম্যাচটাও হেরেছিল ১৮১ রানে।
চতুর্থ ইনিংসে চারশর’র ওপরও রান করার রেকর্ড রয়েছে বাংলাদেশের। মিরপুরে ২০০৮ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে মোহাম্মদ আশরাফুলের সেঞ্চুরি আর সাকিব আল হাসানের ৯৬ রানের ওপর ভর করে বাংলাদেশ করেছিল ৪১৩ রান। যদিও ওই ম্যাচে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ হেরেছিল ১০৭ রানে। অতীতের ঘটনাগুলো সামনে এনে আজ সাকিব-মাহমুদউল্লাহরা কতটুকু উইকেট কামড়ে পড়ে থাকতে পারে, সেটাই দেখার বিষয়।