বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তায় জৈবপ্রযুক্তি (বায়োটেকনোলজি) ও জিন প্রকৌশল বিদ্যার বিকল্প নেই। দেশের চলমান ও ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সংকটের কথা মাথায় রেখে তাই জৈবপ্রযুক্তি গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
রোববার রাজধানীর পরমাণু শক্তি কমিশন মিলনায়তনে জৈবপ্রযুক্তি বিষয়ক সেমিনারে গবেষকরা এসব অভিমত দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তাপুষ্ঠ গবেষণা প্রকল্পের (BAS-USDA-PALS) অর্থায়নে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী এ সেমিনারের আয়োজন করে। সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এম শমসের আলীর এতে সভাপতিত্ব করেন।
সেমিনারে বাংলাদেশে জৈবপ্রযুক্তি গবেষণা বিষয়ক প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ, ট্রান্সজেনিক টেকনোলজি যেমন, জিএম ফুড (জেনেটিকেললি মডিফায়েড) ও উচ্চ ফলনশীল বীজ বিষয়ক তিনটি গবেষণা নিবন্ধ উপস্থাপিত হয়।
‘ট্রান্সজেনিকস: ডিমিস্টিফিকেশনের (জিন স্থানান্তর: স্পষ্টকরণ) ওপর গবেষণা নিবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি এবং মলিক্যুলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক জেবা ইসলাম সিরাজ।
নিবন্ধে জিনতত্ত্বের মাধ্যমে রূপান্তরিত খাদ্য বিটি বেগুন, গোল্ডেন রাইস ইত্যাদির বিষয়ে চলমান বিতর্ক বা ভুল ধারণার প্রসঙ্গে নানা তথ্য ও মতামত তুলে ধরা হয়।
এতে উল্লেখ করা হয়, জিনপ্রকৌশলের মাধ্যমে রূপান্তরিত কোনো একটি ফসলের জাতের মধ্যে অন্যটি ঢুকে যেতে পারে, যার কারণে প্রকৃতির বিভিন্ন প্রজাতির স্বকীয়তা হারানোর আশঙ্কা করছেন খোদ গবেষকরাই। যদিও বিষয়টি প্রমাণিত নয়।
অধ্যাপক জেবা ইসলাম উল্লেখ করেন, ‘জিনপ্রকৌশল বিদ্যা ক্ষতিকারক নয়। আমরা নির্দ্বিধায় এটি গ্রহণ করতে পারি। কারণ ভবিষ্যতের খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে এ ধরনের প্রযুক্তির বিকল্প নেই।’
‘বাংলাদেশে উচ্চ ফলনশীল বীজ উৎপাদন’ বিষয়ের ওপর আরেকটি গবেষণা নিবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক রাখা হরি সরকার।
নিবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ‘উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবনে আমরা সফল হয়েছি। বিশেষ করে ধান ও সবজি ফসলের ক্ষেত্রে এটা সফলতা এনেছে। তাই আমাদের প্রকৃতি, আবহাওয়া এবং ফসল আবাদের অন্যান্য বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে বিদেশ থেকে বীজ আমদানি না করে দেশেই আমরা উচ্চ ফলনশীল বীজ উৎপাদনের জন্য অগ্রসর হতে পারি। এ সংক্রান্ত গবেষণার ধারাকে আরও প্রতিষ্ঠিত করতে পারি।’
‘দেশে বায়োটেকনোলজি(জীবপ্রযুক্তি বা প্রাণপ্রযুক্তি) গবেষণার চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ের ওপর তৃতীয় গবেষণা নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমীর ফেলো ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমেস্ট্রি এবং মলিক্যুলার বিভাগের অধ্যাপক হাসিনা খান।
উপস্থাপিত নিবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাঠদানেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। পৃথকভাবে গবেষণা কার্যক্রম চালোনো কঠিন হয়ে পড়ে।’
হাসিনা খান বলেন, ‘তাছাড়া গবেষণার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বায়োটেকনোলজির মতো বিজ্ঞানে নতুন করে সংযোজিত বিষয়ে গবেষণার তহবিল প্রাপ্তির সুযোগ আমাদের দেশে এখনো পর্যাপ্ত নয়। বিজ্ঞান গবেষণায় সমৃদ্ধ বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সরকার এ জাতীয় গবেষণাকে খুবই প্রধান্য ও প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে থাকে। বিশেষ করে আমাদের কৃষি, চিকিৎসা, পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়ের সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বায়োটেকনোলজির গবেষণাকে আরো এগিয়ে নিতে হবে।’
বাংলাদেশ বিজ্ঞান সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির গণিত ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নঈম চৌধুরীর সঞ্চালনায় সেমিনারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান অধ্যাপক, বিজ্ঞান গবেষণায় সম্পৃক্ত শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।