বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহের মেলার এবারের আকর্ষণ লাখ টাকার বাঘাইড় মাছ। ৮২ কেজি ওজনের এই মাছটি ১৫শ টাকা কেজি দাম চাওয়া হলেও ১৪শ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হয়েছে।
বুধবার বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় দেড় শতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা শুরু হয়। গভীর রাত পর্যন্ত চলবে মেলায় মাছ বেচাকেনা। সন্যাসী মেলা নামে শুরু হওয়া পোড়াদহের এ মেলাকে এখন বলা হয় মাছের মেলা। স্থানীয়রা আবার বলেন, জামাই-মেয়ে মেলা।
এবারের মেলায় সবচেয়ে বড় বাঘাইড় মাছের ওজন ছিল ৮২ কেজি। মাছের দাম হাকা হয়েছে ১৫শ টাকা কেজি। শেষ পর্যন্ত মাছটি ১৪শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। সেই হিসেবে মাছটির মূল্য দাঁড়ায় ১ লাখ ১৪ হাজার ৮শ টাকা।
বাঘাইড় মাছটি নিয়ে এসেছেন গাবতলী উপজেলার মহিষাবান গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী দুখু মিয়া। রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে আনা মাছটি পদ্মা নদীর বলে তিনি জানান।
এছাড়া মেলায় উঠেছে ২৫ কেজির বোয়াল মাছ, ৪৫ কেজির কাতলা মাছ, ২২ কেজির রুই মাছ, ১৮ কেজির পাঙ্গাস। আর ৫ থেকে ১৫ কেজির আরো রকমারি মাছের ছড়াছড়ি মেলাতে। মঙ্গলবার গভীর রাত থেকেই ট্রাকে করে মাছ নিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে যান ক্রেতারা। সেখানে বড়বড় চৌবাচ্চা তৈরি করা হয়। তাতে জীবন্ত মাছ দেখে পছন্দ করে কিনে নেন ক্রেতারা।
এই মেলার আরও একটি আকর্ষণ হলো মিষ্টি। এবারেও মাছের পাশাপাশি মিষ্টির ওজন ছিল ২০ কেজি। প্রথম দিন জামাই বরণ এবং দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার বউমেলার মধ্যে দিয়ে শেষ হবে ঐহিত্যবাহী পোড়াদহ মেলা।
স্থানীয়া জানান, বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নে ইছামতি নদীর শাখা (খাল) সংলগ্ন পোড়াদহ নামক স্থানে বসে এই মেলা। প্রায় দেড়শতাধিক বছর আগে বগুড়া-চন্দনবাইশা সড়ক সংলগ্ন পোড়াদহ খালের পাড়ে এক বিশাল বট গাছের নিচে আয়োজন করা হতো সন্যাসী পূজার। প্রতি বছরের মাঘ মাসের শেষ বুধবার আয়োজন করা এই মেলা। কালের বিবর্তনে এই মেলা হয়ে ওঠে পূর্ব বগুড়াবাসীর মিলনমেলা। পোড়াদহ নামক স্থানে হয় বলে এ মেলার নাম হয়ে যায় পোড়াদহ মেলা।
মেলাকে ঘিরে আশপাশে প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ মেয়ে ও জামাইকে নিমন্ত্রণ দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকেন। তাদের সঙ্গে নিমন্ত্রণ দিয়ে থাকে স্বজনদের। এ কারণে স্থানীয়রা আবার এ মেলাকে জামাই-মেয়ে মেলা বলে থাকে।
এবার মেলা পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন মহিষাবান ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম। তিনি জানান, হাজার হাজার মানুষের পদচারণা হয়ে থাকে এ মেলায়। আশপাশের ২০ গ্রামের মানুষের কাছে ঈদের পর এটিই দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব। মেলাকে কেন্দ্র করে জামাই ও মেয়েসহ আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত দেয়া হয়ে থাকে।
স্থানীয় সমাজ সেবক লুৎফর রহমান সরকার স্বপন জানান, হাজার হাজার মানুষের পদচারণা হয়েছে এ মেলায়। গাবতলী উপজেলাসহ পাশ্ববর্তী সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, ধুনট, বগুড়া শহরের লাখো মানুষ এসেছে মেলায়। এ অঞ্চলের মানুষের কাছে ঈদের পর এটিই দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব।
বগুড়ার গাবতলী মডেল থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আ.ন.ম আব্দুল্লাহ আল হাসান জানান, মেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মেলার কয়েকদিন আগে থেকেই বিক্রেতারা ভিড় করতে থাকে। এ কারণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।