মোবাইল নম্বর ক্লোন করে প্রতারণা করছে কয়েকটি চক্র

মোবাইল নম্বর ক্লোন করে প্রতারণা করছে কয়েকটি চক্র

সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর ‘ক্লোন’ করে প্রতারণা করছে কয়েকটি চক্র। সম্প্রতি বিভিন্ন জেলার ডিসি ও ইউএনও সহ সরকারি অফিসের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের মোবাইল নম্বর ক্লোন করে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে লাখ লাখ টাকা।

একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে যেকোনো ব্যক্তির মোবাইল নম্বর হুবহু নকল করে কাউকে ফোন করা যায়। যার মোবাইলে ফোনটি আসছে তিনি কোনভাবেই বুঝতে পারবেন না ফোনটি আসল ব্যক্তি করেছেন না ‘ক্লোন’ করে অন্য কেউ করেছেন।

জঙ্গিবাদ, খুন, ধর্ষণ, নাশকতা এবং অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি সম্প্রতি এ প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েছে একাধিক সংঘবদ্ধচক্র। বিভিন্ন স্থান থেকে অভিযোগ আসার পর র্যাব-৪ এর মেজর মো. খুরশীদ আলম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইব্রাহিম খলিলের নেতৃত্বে গত রাতে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানাধীন এলাকায় অভিযান পরিচালনা ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

এসময় তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ২২টি, সিম ৫৩টি, ল্যাপটপ ২টি, সিপিইউ ৪টি, মনিটর ৫টি, মডেম ১টি ও নগদ ১৭ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারস্থ র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) লুৎফুল কবীর।

তিনি বলেন, ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন চাঁন প্রতারণার শিকার হন। গত ১২ ডিসেম্বর তাকে ঝিনাইগাতী উপজেলার নির্বাহী অফিসারের মোবাইল নম্বর থেকে কল দিয়ে সরকারি প্রকল্পের বরাদ্দের কথা বলে বিকাশের মাধ্যমে ৭০ হাজার টাকা নেয়া হয়।  বিষয়টি বুঝতে পেরে এ বিষয়ে ঝিনাইগাতী থানায় ১৪ ডিসেম্বর একটি জিডি করেন তিনি। (জিডি নম্বর ৫১২)।

গত বছরের ৬ অক্টোবর ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানের মোবাইলে জেলার ডিসির মোবাইল নম্বর থেকে একটি ফোন আসে ও একই কায়দায় ৫০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় চক্রটি।

উপজেলা চেয়ারম্যান প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে ডিসিকে অবগত করেন। ১৯ নভেম্বর আশুগঞ্জ থানায় এ বিষয়ে মামলা রুজু করেন (মামলা নং-১২)।

একইভাবে মৎস অধিদফতরের মহা-পরিচালকের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর ক্লোন এর মাধ্যমে অনৈতিক দাবি এবং নির্দেশনা প্রদানের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে রমনা মডেল থানায় গত ৫ জানুয়ারি একটি জিডি করেন (জিডি নং ২৭০) মৎস অধিদফতরের মহাপরিচালক।

এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে র্যাব। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে চক্রের মূল হোতা আশরাফুল ইসলাম ওরফে আপেল (২০)। মাহমুদল হাসান ওরফে হৃদয় চৌধুরী (১৯) নম্বর ক্লোন করতে সরাসরি সহায়তা করতো। রাকিবুল ইসলাম মূল হোতা আপেলের প্রধান সহকারী। ব্যক্তিগত সহকারি, পিয়ন, বাড়ির দারোয়ান ও কাজের লোক সেজে ফোনে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছ থেকে টাকা নিতো। মহিদুল ইসলাম ওরফে মিলন (২০), আবু কাউছার ওরফে সাবু (১৯) ও নাজমুল হাসান (১৯) সহযোগী হিসেবে বিকাশে টাকা সংগ্রহ করতো। সাগর হোসাইন (২৬) ও আমানউল্লাহ আমান (২৮) অবৈধভাবে ইন্টারনেটের ব্যবসায়ী ও চক্রের সহযোগী। বিল্লাল হোসেন (২১) নামে আটক আরেকজন ইয়েস কার্ড অ্যাপস বিক্রি করতেন।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা সংঘবদ্ধভাবে ইতোমধ্যে কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ, নীলফামারী, দিনাজপুর, ব্রাক্ষণবাড়ীয়াসহ আরো অনেক জেলার ডিসির মোবাইল নম্বর ক্লোন করে প্রতারণা করেছে। এছাড়া ভোলা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, ঠাকুরগাঁও, চাঁদপুর, মেহেরপুর এবং বাগেরহাটসহ ৪০টির বেশি উপজেলার ইউএনও-র পরিচয় দিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ লাখ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা আরো জানায়, প্রতারক চক্রটি ইয়েস কার্ড অ্যাপস এর মাধ্যমে মোবাইল নম্বর ক্লোন করে নিজেরা ইউএনও ডিসি’র পরিচয়ে গম, চাউল এবং অন্যান্য কাজের জন্য বরাদ্দের কথা বলে বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান ও জনসাধারণের কাছ থেকে বিকাশ নম্বরের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

লুৎফুল কবীর বলেন, গ্রেফতারকৃতদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।

বাংলাদেশ