‘বাইশে শ্রাবণ’, শুধুই কী একটি তারিখ! নাহ, এই তারিখের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বেদনার স্মৃতি। এই তারিখেই চলে গিয়েছিলেন বাঙালীর প্রানের মানুষ রবীন্দ্রনাথ। ‘বাইশে শ্রাবণ’ নামে সম্প্রতি এক অনবদ্য থ্রিলার ছবি নির্মাণ করেছেন ‘অটোগ্রাফ’ খ্যাত পরিচালক শ্রীজিত মুখার্জি।
গতবছর ৩০ সেপ্টেম্বর ছবিটি কলকাতায় রিলিজ পায়। ব্যবসা সফল এই ছবিটি লুফে নেয় পশ্চিমবঙ্গের তরুণ প্রজন্ম। একজন সিরিয়াল কিলার গল্প নিয়ে নির্মিত এই থ্রিলার ছবিটি বর্তমানে ডিভিডিতে পাওয়া যাচ্ছে।
‘অটোগ্রাফ’ ছবির আকাশচুম্বী সাফল্যের পর অনুপম রায় আবারও এককভাবে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন এই ছবিতে। ছবির বিভিন্ন গানে কণ্ঠ দিয়েছেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, রূপম ইসলাম, রাঘব, রূপঙ্কর, সপ্তর্ষি ও শ্রেয়া ঘোষাল। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, রাইমা সেন,পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, গৌতম ঘোষ, পরম, আবীর চট্টোপাধ্যায় এবং শ্রেয়া ঘোষাল।
থ্রিলার ছবি ‘বাইশে শ্রাবণ’। হাজার বছর ধরে হাঁটিতেছি , জীবননান্দের কবিতা দিয়ে শুরু। এক সাহিত্য-প্রেমী কবির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে কাহিনী নির্মাণের প্রকৃত বক্তব্যটি শেষ হয়। এই কি চাই ? গভীর রাতে এক পতিতার উক্তি। আজ হবে না…। এই বলতেই অকস্মাৎ খুন। রহস্যের জাল এগুতে থাকে কিন্তু খুনিকে চিহ্নিত করা যায় না। অতঃপর জেল থেকে বের হওয়া আসামির সাথে কে যেনও কথা বলছে তাকে দেখানো হচ্ছে না। ভীষণ এক নাটকীয়তা। এটি একটি ওয়েজ শর্টের মাধ্যমে ধারণ করা হয়েছে। এগিয়ে যেতে থাকে কাহিনী।
রাইমা সেনের সাথে পরমব্রত চট্রোপাধ্যায়ের প্রেম। অভিমান করে গাড়ি থেকে নেমে যাওয়া কথা-কাটাকাটি। অতঃপর গৌতম ঘোষের কবিতা আবৃত্তি। ব্যাক টু ক্যামেরায় দৃশ্যায়ন। সে প্রতীক্ষায় থাকে তার লেখা কবিতা একদিন ছাপা হবে। সে উন্মাসিক, উন্মাদ। অন্যদিকে রহস্যময়তা সৃষ্টিকারী চরিত্র প্রসেনজিৎ তার কাছে কাউকে আসামি মনে হলে সে তাকে খুন করে ফেলত। যদি সে আসামি আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে গেলেও। সে কাউকে ক্ষমা করতো না। তার ভীতর চাপা কষ্ট কাজ করতো। অন্যদিকে ছবিতে রাইমা সেনের সাথে তার বয়ফ্রেন্ড পরমব্রত চট্রোপাধ্যায়ের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। চারদিকে খুন আর খুনের ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রহস্য উদঘাটনে কেউই সফল হতে পারে না। এরপর সেই পুলিশ অফিসার প্রসেনজিৎয়ের কাছে ধরনা দিতে হয়। যাকে একদিন বহিষ্কার করা হয় চাকরি থেকে। তার স্ত্রী ও সন্তানকে মেরে ফেলা হয়। যার কারণে সে সিরিয়াল কিলার হয়ে যায়।
সমাজের প্রতি মানুষের প্রতি কোন দয়া-মায়া কাজ করে না। সে খুনের কবল থেকে বাদ যায় না কোন কবিও। কারণ সে শেষে গৌতম ঘোষকেও মেরে ফেলে। যদিও একটি খুনও সে নিজ হাতে করে নি। সব অন্যেও দ্বারা করিয়েছে। তাই তাকে ধরার মত কোন ইভিডেন্স ছিল না কারো কাছে। কাহিনী এগিয়ে যায়। একদিন পরমব্রত মাতাল অবস্থায় তার বেহাল দশা তাকে সেখান থেকে নিয়ে আসে রাইমা সেন। ওই মুহূর্তে প্রসেনজিৎয়ের অসাধারণ সংলাপ রাইমা সেনকে উদ্দেশ্য করেÑ ‘জীবনে ডাল-ভাত আর বিরিয়িনীর তফাৎটা বুঝতে শিখ।’ অতঃপর তাকে নিয়ে চলে আসে রাইমা সেন। এগিয়ে যায় কাহিনী।
বাংলা ভাষায় নির্মিত একটি উৎকৃষ্ট থ্রিলার ছবির দৃষ্টান্ত হলো ‘বাইশে শ্রাবণ’। রহস্য কাহিনী যাদের পছন্দ তাদের এই ছবি ভালো লাগবে। কারণ ছবিটির কাহিনীতে আছে নাটকীয়তা আর টান টান উত্তেজনা।