দীর্ঘ চার মাস ঢাকায় পর সিলেটে নিজ বাড়িতে ফিরেছেন কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিস। বুধবার বেলা আড়াইটায় বিমানযোগে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান তিনি।
পরে সেখান থেকে ২টা ৪০ মিনিটের সময় বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। বেলা সোয়া ৩টায় তিনি বাড়ি গিয়ে পৌঁছালে শহরতলির হাউসা গ্রামের লোকজন খাদিজাদের বাড়িতে ভিড় করেন। এ সময় তার মাসহ স্বজনরা তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এছাড়া খাদিজার সঙ্গে তার ভাই শাহীন আহমদ ছিলেন। পাশাপাশি বিমানবন্দরে তার বাবা মাসুক মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে খাদিজার ভাই শাহীন আহমদ জানান, এক সপ্তাহের জন্য তাকে সিলেট নিয়ে আসা হয়েছে। আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার পরে আবারও চিকিৎসার জন্য সিআরপিতে নিয়ে যাওয়া হবে।
এদিকে, গত ৮ জানুয়ারি আদালতে খাদিজার সাক্ষ্যগ্রহণের কথা থাকলেও তার শারীরিক অবস্থা দীর্ঘ যাত্রার জন্য এখনো পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে ছাড়পত্র দেননি। ফলে তিনি সিলেটের আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দিতে পারেননি।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি খাদিজাকে আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য সমন জারি করেছেন বিচারক। আলোচিত এ মামলায় মোট ৩৭ সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। খাদিজার সাক্ষগ্রহণের পর যুক্তিতর্কের তারিখ নির্ধারণের কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৩ অক্টোবর সিলেট এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমের চাপাতির কোপে গুরুতর আহত হন খাদিজা। প্রথমে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর সেখান থেকে ৪ অক্টোবর তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে এনে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়।
স্কয়ার হাসপাতালে প্রথম দফায় খাদিজার মাথায় ও পরে হাতে অস্ত্রোপচার করা হয়। তার অবস্থার একটু উন্নতি হলে লাইফ সাপোর্ট খুলে দেয়া হয়। এরপর আইসিইউ থেকে এইসডিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
সেখান থেকে ২৬ অক্টোবর তাকে কেবিনে নেয়া হয়। এরপর আবারও মাথায় ও হাতে অস্ত্রোপচার করা হয়। বর্তমানে অনেকটা ভালো অবস্থায় রয়েছেন খাদিজা।
গত ২৮ নভেম্বর স্কয়ারের চিকিৎসকদের পরামর্শে সাভারের পক্ষাঘাত গ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) নেয়া হয় তাকে। সেখান থেকে আজ তাকে সিলেট আনা হলো।
হামলার দিন ঘটনাস্থল থেকে বদরুল আলম আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে জনতা। আদালতে হামলার দায় স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছেন বদরুল। হামলার দায়ে তাকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গত ২৯ নভেম্বর চাঞ্চল্যকর এই মামলার একমাত্র আসামি বদরুল আলমকে (২৯) বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৫ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেন আদালত। এ মামলায় সাক্ষী মোট ৩৭ জন। মামলার চার্জশিটে দ্বিতীয় সাক্ষী হচ্ছেন খাদিজা আক্তার নার্গিস।
আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খাদিজার ওপর হামলার পর মামলা হওয়ার একমাস পাঁচদিনের মাথায় শাহপরান থানার উপ-পরিদর্শক হারুনুর রশিদ গত ৮ নভেম্বর অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে দাখিল করেন। ১৫ নভেম্বর আদালতে অভিযোপত্রের শুনানি শেষে তা গৃহীত হয়।