বিশ্বের সাতটি মুসলিম প্রধান দেশের শরণার্থী ও অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেনের শরণার্থী ও অভিবাসীদের জন্য ৯০ দিনের জন্য এবং সিরীয়দের ক্ষেত্রে অনির্দিষ্টকালের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
ট্রাম্পের এমন নিষেধাজ্ঞা জারির পর সারা ইয়ারজানি নামে ইরানি বংশোদ্ভূত এক শিক্ষার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। বিমানবন্দর থেকেই তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলস বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের কাছে নিজের পাসপোর্ট হস্তান্তর করার পর সারা একেবারেই নিশ্চিত ছিলেন দেশটিতে প্রবেশে তার কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। কারণ এর আগেও তিনি বহু যুক্তরাষ্ট্রে আসা-যাওয়া করেছেন। কিন্তু প্রায় ২৩ ঘণ্টা বিমানবন্দরে আটকে থাকার পর সেখান থেকে চলে আসতে হয়েছে তাকে।
৩৫ বছর বয়সী ওই শিক্ষার্থী এমন ঘটনায় পুরোপুরি ভেঙে পড়েছেন। সোমবার এএফপিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে সারা জানান, তিনি এখন ভিয়েনাতে আছেন। সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা সারা। শুক্রবার সন্ধ্যায় লস অ্যাঞ্জেলসে পৌঁছান তিনি। কিন্তু ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার কারণে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
সারা বলেন, ‘আমি ছুটি কাটাতে আমার বোনের কাছে কানাডায় গিয়েছিলাম। এরপর সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়া হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা দেই।’
সারা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট ফর হিউমেন সাইন্সের হলিস্টিক হেলথ ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী। ক্ষোভ প্রকাশ করে সারা বলেন, ‘আমি সত্যিই ভাবিনি আমাকে এভাবে আটকে দেয়া হবে। আমি এর আগেও দেশটিতে প্রবেশ করেছি। সেসময় আমার সঙ্গে বেশ ভালো আচরণ করা হয়েছে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সব কাজ শেষ করে আমি খুব স্বাভাবিকভাবেই দেশটিতে প্রবেশ করেছি।’
কিন্তু এবারই প্রথম তার পাসপোর্ট নিয়ে তাকে অপেক্ষা করতে বলেন কর্মকর্তারা। সে সময় দুই নারী কর্মকর্তা তার গায়ের শাল, গহনা এবং তার মোবাইল ফোনও বাজেয়াপ্ত করেন। পরে অবশ্য তাকে তার জিনিসপত্র ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
চার ঘণ্টা তাকে জেরা করা হয়। সেসময় তাকে মোবাইল ফোনও ব্যবহার করতে দেয়া হয়নি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর তাকে একটি ফর্মে স্বাক্ষর করতে বলা হয়। সেখানে লেখা ছিল সারা স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করছেন। সারার বিরুদ্ধে কর্মকর্তারা অভিযোগ আনেন যে তার স্টুডেন্ট ভিসার মেয়ার শেষ হয়ে গেছে।
এক কর্মকর্তা সেসময় সারাকে বলেন, তোমার হাতে দু’টি পথ খোলা রয়েছে। তোমাকে স্বেচ্ছায় এই দেশ ছাড়তে হবে অথবা তুমি রাজি না থাকলে জোর করে তোমাকে বের করে দেয়া হবে। ফলে এক থেকে পাঁচ বছরের জন্য তুমি এই দেশে প্রবেশ করতে পারবে না।
সারা বলেন, ‘ওই কর্মকর্তা যা বলছিলেন তা ছিল সত্যিই আতঙ্কজনক। আমার কাছে আর কোনো উপায়ও ছিল না।’
তিনি লস অ্যাঞ্জেলসে পৌঁছেছিলেন শুক্রবার রাত সাড়ে আটটায় আর তাকে সেখান থেকে বের হতে হয়েছে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। প্রায় একদিন তাকে বিমানবন্দরে আটকা থাকতে হয়েছে।