বাংলাদেশের মতো দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা একটি বড় সমস্যা। এখানে বহু গ্রামেই দেখা যায় ১০ হাজার রোগীর জন্য মাত্র তিনটি বেডের হাসপাতাল। অর্থাৎ হাসপাতালে যে ধরনের সেবা প্রয়োজন তা নেই। আর অধিকাংশ চিকিৎসক এবং হাসপাতাল কর্মীরই সঠিক প্রশিক্ষণ নেই।
সবচেয়ে বেশি সমস্যা নারীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে। অধিকাংশ নারীরাই অসুস্থতা বা গর্ভাবস্থায় সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না। এই লিঙ্গ বৈষম্য বাংলাদেশী স্বাস্থ্যসেবাকে অনেক বেশি প্রভাবিত করছে।
তবে দেশের বেশ কিছু এনজিও সংস্থা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। এই সংস্থাগুলোর মধ্যে একটি ফ্রেন্ডশিপ অ্যাসোসিয়েশন যারা ভাসমান হাসপাতালের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে।
অনুদানে পরিচালিত এই সংস্থাটি পুরনো এবং ক্ষতিগ্রস্ত নৌকা এবং জাহাজ মেরামত করে সেগুলোকে ভাসমান হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশেষ করে যেসব এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে সাধারণ মানুষরা বঞ্চিত হচ্ছে সেখানে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে সংস্থাটি।
ফ্রেন্ডশিপের প্রথম ভাসমান হাসপাতালটি ছিল ‘লাইফবয়’। ইউনিলিভার এবং সিআইডিএর আর্থিক সহায়তায় একটি বজরা নৌকাকে ভাসমান হাসপাতালে পরিণত করে দরিদ্র লোকজনকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া শুরু করে। এরপরেই দ্বিতীয় যে ভাসমান হাসপাতালটি তৈরি করা হয়েছিল এর নাম ছিল এমিরেটস।
এমিরেটস এয়ারলাইন সংস্থাটিতে অনুদান হিসেবে একটি জাহাজ দিয়েছিল। সেটাই ভাসমান হাসপাতাল হিসেবে কাজে লাগানো হয়। প্রতিবছর জাহাজ দুটি ৬০ হাজার মানুষকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে।
তৃতীয় ভাসমান জাহাজটির নাম রংধনু। অনুদান পাওয়া এই জাহাজটি চিটাগাং বন্দরে রয়েছে। সেখানেই এটি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করছে।
ভাসমান এই জাহাজগুলোতে একদল স্বেচ্ছাসেবক, মেডিকেল স্টাফ এবং বেশ কিছু ল্যাবরেটরি; এর মধ্যে একটি রেডিওলজি ইউনিট, আই ইউনিট, গাইনিলজিকাল এবং পেডিয়েট্রিক কনসালটেশন এবং একটি অপারেশ থিয়েটার রয়েছে।
এখানে বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। গাইনিকোলোজিকাল ইউনিটের আওতায় বহু দরিদ্র নারীকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। এসব নারীরা অনেক সময় নিজেদের সম্প্রদায়ের মধ্যেই সেবা পাচ্ছে না। রংধনু প্রতিবছর প্রায় ৪৫ হাজার রোগীকে জরুরি চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে।