টাঙ্গাইলের ঘাটাইল থেকে অপহরণের দুই বছর পর ইন্টারপোলের মাধ্যমে ভারতে পাচারকৃত তরুণীকে উদ্ধার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব-১২) সদস্যরা।
এ ঘটনায় জড়িত আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্রের ১২ সদস্যকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। গতকাল রোববার পাচার হওয়া তরুণীকে ভারত থেকে বাংলাদেশে আনতে সক্ষম হয় র্যাব।
সোমবার দুপুরে র্যাব-১২ সিপিসি ৩ এর টাঙ্গাইলের কোম্পানি কমান্ডার মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, ২০১৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দেউলাবাড়ী গ্রামের খোকা মিয়ার স্ত্রী ও পাচারকৃত তরুণীর ফুপু লিখিত অভিযোগে জানায়, কে বা কারা ২০১৫ সালের ১৭ আগস্ট ভাতিজি সাবিনাকে (১৮) অপহরণ করে নিয়ে যান। অপহরণের ১ মাস পর ২৫ সেপ্টেম্বর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ফোন করে জানায় সাবিনা ভারতে আছে। ৫ লাখ টাকা পাঠালে তাকে বাংলাদেশে পাঠানো হবে। বিষয়টি নিয়ে টাঙ্গাইল কার্যালয়ে এসে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। এ অভিযোগের মাধ্যমে তিনি অপহৃত সাবিনার ক্ষতি সাধনের হাত থেকে রক্ষা করার আবেদন জানায়।
এরই প্রেক্ষিতে ও মুক্তিপণ আদায়ের ফোনের সূত্র ধরে র্যাব-১২ সিপিসি ৩ টাঙ্গাইল বিষয়টি অনুসন্ধান শুরু করে। ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পর র্যাব সদর দফতরসহ ইন্টারপোলের সহায়তা কামনা করে পত্র যোগাযোগ ও ভিকটিমকে উদ্ধারের প্রচেষ্টা চালানো হয়।
একই সঙ্গে র্যাব সদর দফতরের মাধ্যমে ইন্টারপোলে পত্র যোগাযোগ করে ভারতে পাচার হওয়া সাবিনাকে ফেরত আনা ও উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়। একপর্যায়ে সাবিনাকে নগদ টাকার মাধ্যমে ফেরত এনে আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্রের সদস্যদের ধরতে ফাঁদ পাতা হয়। সেই ফাঁদেই ধরা পড়েন পাচারকারী চক্রের সদস্যরা।
এরপর ঘটনায় জড়িত খুলনার গোবর চাকা মোল্লাবাড়ি গ্রামের মৃত হান্নান হাওলাদারের ছেলে রোকন (২২) একই জেলার তেরখাদা উপজেলার শেখপুরা গ্রামের মৃত মোজাম্মেল সরদারের ছেলে আমির হোসেন (২৩), টাঙ্গাইলের বাবুপুর গ্রামের মৃত হায়েত আলী মাস্টারের মেয়ে আয়েশা আক্তার আশা (২৮), গোপালগঞ্জ নিজরা বটবাড়ি গ্রামের মাজেদ খন্দকারের ছেলে হাসান খন্দকার (৩০), যশোর ঘড়িভাঙা গ্রামের ইব্রাহিম মোড়লের ছেলে হাবিবুর রহমান (২৮), রুহুল আমিনের ছেলে আবু সামাদ, নড়াইলের বেন্দার চর গ্রামের মৃত তৈয়ব মোল্লার ছেলে মিল্টন মোল্লা (২৩), চাঁদপুরের চররামপুর গ্রামের আব্দুল মজিদ মিজির ছেলে মামুন মিজি, গোপালগঞ্জের মানিকদা গ্রামের মো. রেজাউলের ছেলে আবু তাহের (৩০), কুমিল্লার মুন্সীর হাট গ্রামের মৃত ছালামতের ছেলে সালমান (৩২) ও সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলার শেখপুরা গ্রামের মৃত রকফান মোল্লার ছেলে আজগর মোল্লাকে (৩১) গ্রেফতার করে র্যাব।
গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ তারিখে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল থানায় দুটি মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা হয়। গ্রেফতাররা বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলহাজতে রয়েছে।
গ্রেফতাররা আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে সাবিনা পাচারে জড়িত বলে স্বীকার করাসহ পাচারকারী তরুণীকে দিল্লীর পতিতালয়ে বিক্রি করা হয়েছে বলে জানায়।