হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেন যে, হজরত আদম আলাইহি সালাম থেকে হজরত নূহ আলাইহিস সালাম পর্যন্ত দশটি যুগ ছিল। ঐ যুগের লোকেরা সত্য ও সঠিক শরিয়তের অধিকারী ছিলেন। ১০ যুগ অতিবাহিত হওয়ার পর তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়।
তখন আল্লাহ তাআলা মানুষের বিভেদ দূর করতে সত্য দ্বীনসহ নবিগণকে দুনিয়াতে পাঠান। যার ধারাবাহিকতায় বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পবিত্র কুরআনুল কারিমসহ এ দুনিয়াতে প্রেরণ করেন।
যারা কুরআনের ওপর অটল ও অবিচল থাকবে; কোনো বিষয়ে মতবিরোধ করবে না। তারাই সঠিক পথ লাভ করবে। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেন-
আয়াতের অনুবাদ-
আয়াত পরিচিতি ও নাজিলের কারণ
সুরা বাকারার ২১৩ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ কথা স্মরণ করিয়ে দেন যে, পৃথিবীর সব মানুষই একই জাতির অন্তর্ভূক্ত ছিলো। কালক্রমে তারা মতভেদে জড়িয়ে পড়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
আর মানুষের মাঝে মতভেদ সব সময় সত্য পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারণেই হয়ে থাকে। এ বিচ্যুতির উৎপত্তি হয় শত্রুতা ও বিদ্বেষ থেকে। মুসলিম উম্মাহর মধ্যে যতদিন পর্যন্ত বিচ্যুতি ছিল না; ততদিন পর্যন্ত এই উম্মাহ তাঁর মূলের (সত্যের) ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে- আহলে কিতাব অর্থাৎ আসামনী কিতাবের অনুসারীরা জুমআর ব্যাপারে মতবিরোধ করল। ইয়াহুদিরা শনিবারকে এবং খ্রিস্টানরা রোববারকে তাদের পবিত্র দিন হিসেবে নির্বাচিত করল। অথচ মহান আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের বিশেষ ইবাদতের জন্য পবিত্র দিন হিসেবে শুক্রবার জুমআর দিনকে মনোনীত করে। এ ব্যাপারে ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরা মতবিরোধ করে বসে।
ইয়াহুদিরা হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের ব্যাপারে বিরোধিতা করল। তাঁকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করে এবং তাঁকে অবৈধ সন্তান বলে তাঁর মা মরিয়মের ওপর অপবাদ দেয়। আবার খ্রিস্টানরা ইয়াহুদিদের বিপরীত করে হজরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহর পুত্র বানিয়ে দেয়।
মহান আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সঠিক কথা জানিয়ে দিলেন; তা গ্রহণ করার তাওফিক দিলেন। তিনি (হজরত ঈসা) আল্লাহর রাসুল এবং তাঁর অনুগত বান্দা ছিলেন।
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম সম্পর্কেও তারা মতভেদ করল। কেউ বলল তিনি ইয়াহুদি ছিলেন। আবার কেউ দাবি করলেন তিনি খ্রিস্টান। মুসলিমদেরকে আল্লাহ তাআলা সঠিক কথা জানিয়ে দিলেন, ‘তিনি একনিষ্ঠ মুসলমান ছিলেন।’
এভাবেই মহান আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে স্বীয় অনুগ্রহে সরল ও সঠিক পথে পরিচালিত করেন।
মুসলমানগণ মদিনা হিজরত করার পর যখন ইয়াহুদি, মুনাফিক এবং আরবের মুশরিকদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পীড়া, কষ্ট পেতে লাগলেন, তখন কোনো কোনো মুসলিম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অভিযোগ করলেন।
মুসলমানদেরকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য তখন এ আয়াত নাজিল করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও বললেন যে, তোমাদের পূর্বের লোকেদেরকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত করাত দিয়ে চিরা হতো এবং লোহার চিরুনি দিয়ে তাদের গোশত ও চামড়াকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করা হতো।
কিন্তু এ অমানুষিক নির্যাতনও তাদেরকে দ্বীন থেকে সরাতে পারেনি। অতঃপর বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! মহান আল্লাহ এ দ্বীনকে এমনভাবে জয়যুক্ত করবেন যে, একজন আরোহী (ইয়েমেনের) সানআ’ থেকে হাজরে মাউত পর্যন্ত একা একা সফর করবে, তার মধ্যে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ভয় থাকবে না।
পড়ুন- সুরা বাকারার ২১২ নং আয়াত
পরিষেশে…
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শত নির্যাতন ও অত্যাচারের মধ্যেও দ্বীন-ইসলামের ওপর অটল অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। বিভিন্ন ফেতনায় নিজেদের না জড়িয়ে সঠিক পথের ওপর থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।