এলসির মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে পান আমদানীর কারণে লোকসানের মুখে পড়েছে নড়াইলের পান চাষিরা। চাহিদা কমে যাওয়ায় চাষি ও ব্যবসায়ীদের লোকসানের বোঝা দিন দিন ভারী হয়ে উঠছে।
পান উৎপাদনের জন্য নড়াইল অন্যতম। জেলার চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত ৯০ ভাগ পান ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। যা দেশের মোট চাহিদার ২০ ভাগ পূরোণ করে। প্রতিদিন চাষিরা তোলা পান বাছাই করে সেগুলো নিয়ে যান বাজারে বিক্রির জন্য।
বর্তমানে বাজারে প্রতি পোন পান বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ২০ থেকে ১২০ টাকায়, যা খরচের তুলনায় অনেক কম। ফলে লোকসানে অনেকেই ভেঙে দিয়েছেন পানের বরজ।
নড়াইলের ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষিরা জানান, বাজারে পানের দাম একেবারেই কম। পান বিক্রি করে এখন আর আমাদের আগের মত লাভ হয় না। লোকসানের বোঝা দিন দিন বাড়ছে। এতে করে পানের বরজ ভেঙে দিতে হচ্ছে। আর এলসির মাধ্যমে পান আমদানির কারণে লোকশানের মাত্রা আরো বেড়ে গেছে।
তারা আরো জানান, এলাকায় বেশ কয়েক বছর যাবৎ পানের গোড়া পচা রোগ দেখা দিচ্ছে। এতে একদিকে যেমন ফলন কম হচ্ছে, অন্যদিকে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে পান গাছ।
জানা গেছে, যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর, সাতক্ষীরার ভোমরা, দিনাজপুরের হিলিসহ বিভিন্ন বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আসছে পান। তবে সব থেকে বেশি পান আমদানি হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। এই বন্দর দিয়ে ২০১৫ সালে ২৪৭৩ মে.টন এবং ২০১৬ সালে ৭৩০৪ মে.টন পান আমদানি হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে প্রতি কেজি পান কেনা হয় ৫০ টাকা ৭০ পয়সা হারে। সেই পান বন্দরের শুল্ক পরিশোধসহ নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে ব্যবসায়ীর মোট খরচ হয় ৮০ টাকা।
এলসি’র মাধ্যমে ভারত থেকে আমদানি করা পান চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট, ফেনীর মজিদ মিয়া বাজার, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, নাঙোল কোর্ট, নাভের পটুয়া, কচুয়া, চাদপুর ও নোয়াখালীর মোজাফ্ফরগঞ্জ, হাজিগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার মোকামে চলে যায়। এসব জায়গায় এলসির পান প্রতি পন বিক্রি হচ্ছে সব থেকে ভাল মানেরটা ৯০ টাকা আর তুলনামূলক কম মানেরটা ৬০ টাকা দরে।
গোবরার পানচাষিরা জানান, এলসির পান আমদানির কারণে আমাদের পান ব্যাপক আকারে মার খেয়ে যাচ্ছে। পান পাঠালেই লোকসান হচ্ছে, লাভ একেবারেই থাকে না।
২০১০ সালের পর থেকে এলসি’র পান আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। যার দরুণ দেশীয় পানের দাম কমেছে শতকরা ১৫ ভাগ। এলসি’র পান আমদানীর কারণে চাষিরা পানের কম দাম পাচ্ছে। ব্যবসায়ীদেরও কিছুটা লোকশান হচ্ছে। তবে যদি এলসি’র পান আমদানি বন্ধ হয় তাহলে পানের বাজার পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আমিনুল ইসলাম জানান, এ জেলা পান চাষের উপযোগী। তবে চাষিদের একই জমিতে বার বার পান চাষের কারণে পানের গোড়াপচা রোগ দেখা দিচ্ছে। তাই গোড়া পচা রোগ প্রতিরোধের জন্য বার বার একই জমিতে পান চাষ না করার জন্য চাষিদেরকে অনুরোধ করা হচ্ছে।
তবে যদি কোনো চাষি পান চাষ করেই থাকেন তাহলে তাকে রোগ প্রতিরোধে ফানজিসাইড ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে। সঠিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার করলে গোড়াপচা রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।