শিক্ষাঙ্গনে বিশৃঙ্খলাকারী যেই হোক, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় তিনি বলেছেন, “আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশ দেওয়া আছে। চেহারা দেখে নয়, যারা শিক্ষাঙ্গনে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে।”
“যারা ছাত্রদের জীবন নষ্ট করছে, তাদের তো মেনে নিতে পারি না,” যোগ করেন শেখ হাসিনা।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির কী তাণ্ডব করল। তা কীভাবে মেনে নিতে পারি? এদের মদদ দিচ্ছে কারা? তারা তো চার দলেই আছে।”
ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে ছাত্রশিবিরের দুই নেতা-কর্মী নিহত হওয়ার পর ফেব্রুয়ারি মাসে বন্ধ হয়ে যায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
৩৮ দিন পর গত ১৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও ছাত্রশিবিরের ধর্মঘটের কারণে অচলই থাকে ক্যাম্পাস। পরে গত বুধবার শিবির ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলে বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাস সচল হয়।
শিক্ষাঙ্গনে বিশৃঙ্খলতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “আমাদের লোক গণ্ডগোল করলেও ছাড়ি না। এমনকি ছাত্রলীগের কেউ যদি এমন কোনো কাজ করে, তাহলে পুলিশকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশ দেওয়া আছে, সে যেই হোক মুখের দিকে তাকাবেন না। অপরাধ করলেই ব্যবস্থা।”
তিন বছর আগে বর্তমান সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পরপরই ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল। তখন ছাত্রলীগের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষুব্ধ আচরণও প্রকাশ পেয়েছিল।
সর্বশেষ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক পক্ষের হামলায় অন্য পক্ষের জুবায়ের আহমেদ নিহত হন। ওই ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহিষ্কার করে।
গণভবনে সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বক্তব্যের শুরুতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষাঙ্গন পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন।
বৈঠকের শুরুতেই আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সমুদ্রসীমার অধিকার প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানানোর কথা বললে সব সদস্য দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, “আশা করি, জনগণ আবার ভোট দিয়ে সেবা করার সুযোগ করে দেবে। ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে রায়ও আমাদের পক্ষে আসবে।”
মিয়ানমার সঙ্গে সমুদ্রসীমার আইনি লড়াইয়ে জয়ের প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, “আমরা প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রেখেই অধিকার নিশ্চিত করেছি। এখানে মিয়ানমার এবং বাংলাদেশে দু’দেশেরই উইন উইন সিচুয়েশন।”
“ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আমরা স্বর্ণ দুয়ার খুলে দিলাম। এই বিশাল সমুদ্রের অধিকার দিয়ে গেলাম,” বলেন তিনি।
এনিয়ে বিরোধী দলের সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সমুদ্র বিজয়ের জন্য বিরোধীদলীয় নেতা সংসদে দাঁড়িয়ে আমাদের ধন্যবাদ দিল; আর, বের হয়েই আরেক কথা বলল। বিরোধী দল দেশের জন্য কিছু করতে পারে না। আমরা করলেই, জনগণকে বিভ্রান্ত করে।”
জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের আচরণের সমালোচনা করে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, “বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা সংসদে অশালীন কথা বলেছেন, নোংরামি করেছেন।
“হাত তুলে একজনের ওপর চড়াও হওয়া, এটা কোন ধরনের আচরণ!”
জাতীয় সংসদে স্পিকার অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস ডেকে স্পিকার তাদের (বিরোধীদল) বের করে দিতে পারতেন। তাদের সদস্য পদ সাময়িক সাসপেন্ড করতে পারতেন।”
শুক্রবারের বৈঠকে সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা ছাড়াও ১৭ এপ্রিল মুজিব নগর দিবসের কর্মসূচিও চূড়ান্ত করা হবে।