খাদ্য বাদে অন্য খাতে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি

খাদ্য বাদে অন্য খাতে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি

মাসওয়ারি হিসাবে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে এলেও খাদ্য বহির্ভূত খাতে তা রেকর্ড ১৩ দশমিক ৯৬ শতাংশে পৌঁছেছে।

পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ১ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে যা ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ ছিল।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচালক শাজাহান আলী মোল্লা বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ এ তথ্য প্রকাশ করেন।

তিনি জানান, মার্চ মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে এই হার ছিল ৮ দশমিক ৯২ শতাংশ।

আর খাদ্য বহিভূর্ত খাতে মার্চে ১৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে যার হার ছিল ১৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

শহরের চেয়ে গ্রামে খাদ্য বহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি বেশি হয়েছে। গ্রামে খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ফেব্রুয়ারিতে গ্রামে খাদ্য বহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল ১৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। মার্চে তা বেড়ে ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশে উঠেছে।

শহর এলাকায় মার্চে খাদ্য বহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১৩ দশমিক ৪২ শতাংশ।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সাধারণত খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি বেশি হলেও সা¤প্রতিক সময়ে খাদ্য বহির্ভূত খাতে বেশি মূল্যস্ফীতি হচ্ছে।

এ বিষয়ে শাজাহান মোল্লার দৃস্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “গত কয়েক মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হচ্ছে। চাল আমদানি করতে হচ্ছে না। যারা চাল মজুদ করে রেখেছিলেন তারা এখন ছেড়ে দিচ্ছেন। সরকার ২৪ টাকা কেজি দরে খোলা বাজারে চাল বিক্রি করছে। এ কারণে চালের দাম কমছে। যার প্রভাব পড়ছে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে।”

অন্যদিকে বাসা ভাড়া, পরিবহন খরচসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় বাড়ার কারণে খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে বলে মত দেন তিনি।

এক প্রশ্নের উত্তরে বিবিএস মহাপরিচালক বলেন, “এখন পর্যন্ত যে তথ্য আছে তাতে মনে হচ্ছে মার্চের খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতিই এ যাবতকালের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি।”

শাজাহান আলী বলেন, ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে চাল ডাল মসলা ও ভোজ্য তেলের দাম কমেছে। অন্যদিকে খাদ্য বহির্ভূত খাতে প্রধানত পরিধেয় বস্ত্র, চিকিৎসা সেবা, পরিবহন, আসবাবপত্র ও গৃহস্থালী এবং লন্ড্রি সামগ্রীর দাম বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতি ঘটেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে ২০১২ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে গড় মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ, আগের বছর একই সময়ে যা ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ ছিল।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলে ধরা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই বিবিএস মহাপরিচালক বলেন, “সুখবর হচ্ছে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতিও কমেছে। তবে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।”

আগামী মাস থেকে (এপ্রিল) ২০০৫-০৬ বছরকে ভিত্তিবছর ধরে মূল্যস্ফীতির হিসাব করা হবে জানিয়ে শাজাহান আলী বলেন, “এতোদিন আমরা ১৯৯৫-৯৬ বছর ভিত্তিবছর ধরে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করতাম। ১৬/১৭ বছর পার হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে অনেক পণ্য যোগ হয়েছে। এখন ৪২২টি পণ্যকে বাস্কেটে নিয়ে মূল্যস্ফীতির হিসাব করা হবে। এতোদিন ৩১৫টি পণ্যের দাম নিয়ে এ হিসাব করা হতো।”

একইসঙ্গে পুরনো নিয়মেও (১৯৯৫-৯৬ বছর কে ভিত্তিবছর ধরে) মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।

মূল্যস্ফীতি কম দেখানোর জন্য ভিত্তিবছর পরিবর্তন করা হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে বিবিএস মহাপরিচালক বলেন, “আমাদের পেছনের দিকে না হেঁটে সামনের দিকে যেতে হবে। অনেকে বলছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সরকার এ নতুন নিয়ম করছে। কিন্তু সেটা মোটেই সত্য নয়। এর মধ্যে অন্য কোনো গন্ধ নেই।”

“তাছাড়া আমরা তো পুরনো-নতুন দুই পদ্ধতিতেই মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করবো,” যোগ করেন তিনি।

অর্থ বাণিজ্য