কবরীর সঙ্গে প্রেমটাকে উপভোগ করতাম : নায়করাজ

কবরীর সঙ্গে প্রেমটাকে উপভোগ করতাম : নায়করাজ

প্রেম শুধু কথার ফুলঝুরি নয়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে কথাও নয়, ভার্চুয়াল জগতের চ্যাটিং প্যানপ্যানানি নয়। একটুখানি চোখের পলকেই প্রেমের অসাধারণ প্রকাশ হতে পারে। এক মিনিটেই অনেক কিছু বলা সম্ভব কিছু না বলেই। এসব মানসিক ব্যাপার স্যাপার রাজ্জাক-কবরী জুটির প্রেম থেকেই বাঙালিরা সব শিখে ফেলেছিলেন।

আমাদের বাংলা সিনেমা জগতের নক্ষত্র প্রেমিকজুটি হলেন রাজ্জাক-কবরী। তাদের মুখের প্রেমময় সংলাপকে দর্শক সবসময় নিজের বলে গ্রহণ করেছেন। পৌরুষদীপ্ত চেহারার অভিনেতা রাজ্জাক আর মিষ্টি হাসির মধু ছড়ানো কবরীর সিনেমাগুলোকে অনুসরণ করেই কাটিয়ে দেয়া যায় এক জীবনের সকল বসন্ত।

রাজ্জাক-কবরী জুটির রসায়ন এখনো মানুষকে কৌতুহলী করে তোলে। হয়তো সেকারণেই সিনেমাতে এমন দ্বিধাহীনভাবে পুর্ণাঙ্গ আবেদন প্রকাশ করতে পেরেছেন যেটাকে তাদের একান্ত নিজের বলে ভেবে ভুল করেছেন অনেকেই। তারপরেও কথা তো থেকেই যায়। সবই কি আসলে অভিনয়ই ছিল! কিছুই কি তবে হৃদয়ের লেনাদেনা নয়!

Kobori

নিজের ৭৬তম জন্মদিনের প্রারম্ভে গতকাল রোববার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় গুলশানে নিজের বাসভবন ‘রাজলক্ষী’তে বসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের ছলে কবরীর সঙ্গে নিজের প্রেম নিয়ে মুখ খুললেন নায়করাজ। কথায় কথায় বললেন, ‘কী যে এক দিন ছিলো তখন। আমাদের আগে রহমান-শবনম জুটি খুব জনপ্রিয় ছিলো। এরপর ১৯৬৮ সালে সুভাষ দত্ত আমাকে আর কবরীকে নিয়ে নির্মাণ করলেন ‘আবির্ভাব’ চলচ্চিত্র। প্রথম ছবি দিয়েই বাজিমাত হয়ে গেল। দর্শকের মনে লেগে গেল আমাদের জুটি। তারপর অসংখ্য ছবিতে কাজ করেছি। যেখানেই যেতাম সবখানেই রাজ্জাক কবরী এক নাম। তোমাদের মা-খালাদের কাছে প্রশ্ন করো যে রাজ্জাক-কবরী সম্পর্কে কিছু বলো। তারা দেখবে ফিসফিস করে বলছে, ওহ বাবা! সে কী প্রেম। আসলে আমার আর কবরীর পর্দার প্রেমটাকে সবাই এতোটাই ভালোবেসেছিলেন যে এটাকে তারা বাস্তব মনে করতেন। সবাই আমাদের প্রেমের স্টাইল ফলো করতেন, আমাদের সংলাপ ব্যবহার করতেন, আমাদের গানগুলো গাইতেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘একবার কবরীর সঙ্গে দেখা হতেই সে কী রাগ। বললাম ব্যাপার কী। তিনি বললেন, রাজ্জাক ভাই কোথাও যেতে পারি না। সবাই দেখলেই বলে ওই যে রাজ্জাক কবরী যাই। আচ্ছা, আমার নাম তো শুধু কবরী। সবাই আগে রাজ্জাক বসায় কেন! আমি হাসতে হাসতে জবাব দিলাম, দেখুন সবাই আপনাকে মিসেস রাজ্জাক বলতে পছন্দ করে। আমার কথা শুনে কবরী তো আরো রেগে গেল। আমিও হাসলাম।’

এতো গেল প্রেমের বায়বীয় ব্যাখ্যা। সত্যিকার অর্থে হৃদয়ের কোথাও কী দুজনের জন্য দুজন কোনো টান অনুভব করেননি। এমন প্রশ্নের জবাবে কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন নায়করাজ। বলতে শুরু করলেন, ‘আসলে কী বলবো। প্রেম তো ছিলোই। এই প্রেমের কোনো সংজ্ঞা নেই। তবে এই প্রেম উপভোগ করতাম। দুজন একসঙ্গে হলে কেমন একটা পরিবর্তন বোধ করতাম। খুব সহজেই মিশে যেতে পেরেছিলাম আমরা। শুটিং স্পটে স্বামী-স্ত্রীর মতোই থাকতাম। কতো মুখরোচক গল্প ছড়িয়েছে আমাদের দুজনকে নিয়ে। কতো পত্রিকায় কতো গল্প-উপন্যাস। মাঝে মাঝে মন খারাপ করতাম। কবরীও অনেক আপসেট হয়ে যেত। কিন্তু জহির রায়হান সাহেবের একটা কথা আমি সবসময় মনে রেখেছি। সেটি হলো, যতোদিন তোমাকে নিয়ে কাগজে গাল-গল্প লেখা আসবে ততোদিন তুমি সুপারস্টার। যেদিন আর কেউ তোমাকে নিয়ে কৌতুহলী হবে না সেদিন তুমি কেউ নয়। তার এই কথাটা ভেবে আমি আর মন খারাপ করিনি কখনো।’

Kobori 2

রাজ্জাক আরো বলেন, ‘চলচ্চিত্রে সবসময়ই জুটি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু কবরী ছিলেন আমার কাছে আরো বিশেষ কিছু। তিনি দারুণ একজন অভিনেত্রী। তারমতো অভিনেত্রী খুব বেশি আসেনি গো ইন্ডাস্ট্রিতে। তোমরা তাকে সম্মান দিও। তার জন্য দোয়া করো।’

প্রসঙ্গত, অভিনয়ের সঙ্গে রাজ্জাকের সখ্যতা যৌবনের শুরুতেই। থিয়েটার করতেন কলকাতায়। তবে চলচ্চিত্রে তার আগেই পা রাখেন ঢাকাই ছবির মিষ্টি মেয়ে খ্যাত অভিনেত্রী কবরী সারোয়ার। ১৯৬৪ সালে প্রয়াত সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘সুতরাং’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে কবরীর অভিষেক। চলচ্চিত্রটিতে কবরীর নায়ক ছিলেন পরিচালক নিজেই। এরপর কেটে যায় চার বছর। এই চার বছরে নায়ক রাজের অভিষেক ঘটে ১৯৬৬ সালে জহির রায়হান পরিচালিত ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রে সুচন্দার সঙ্গে জুটি বেঁধে।

তার দুই বছর পর সুভাষ দত্ত রাজ্জাক-কবরীকে জুটি করে নির্মাণ করেন ‘আবির্ভাব’ চলচ্চিত্রটি। প্রথম চলচ্চিত্রে জুটি হিসেবে দর্শকপ্রিয়তা পায় তারা দুজন। ১৯৬৯ সালে কাজী জহিরের ‘ময়নামতি’ ও মিতার ‘নীল আকাশের নীচে’, ১৯৭০ সালে নজরুল ইসলামের ‘দর্পচূর্ণ’ , মিতার ‘দীপ নেভে নাই’, কামাল আহমেদের ‘অধিকার’ চলচ্চিত্রে রাজ্জাক-কবরীর প্রেমের অনবদ্য উপস্থাপন দর্শকের মনে জুটি হিসেবে স্থান করে নেয়।

এরপর এই জুটি অসংখ্য চলচ্চিত্রে জুটি হিসেবে অভিনয় করেছেন। আর সেসব চলচ্চিত্রে অভিনয় করেই সর্বকালের সেরা জুটি হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন রাজ্জাক-কবরী।

বিনোদন