‘আয়ু’ আর এক বছর

‘আয়ু’ আর এক বছর

রাজধানীতে চলাচলকারী প্রায় ১৬ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশার বেশিরভাগের ‘ইকোনোমিক লাইফ’ শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী বছর। এরপর চলাচলের অযোগ্য অটোগুলোকে ‘ধ্বংস’ করা হবে, মালিকদের কিনতে হবে নতুন বাহন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান খান  বলেন, “মেয়াদ শেষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ মালিকরা যোগাযোগ করলে তাদের জন্য প্রতিস্থাপনের সুযোগ থাকবে। তবে নতুন করে আর অটোরিকশার লাইসেন্সের দেওয়া হবে না।”

বায়ু দূষণের হাত থেকে ঢাকাকে বাঁচাতে চলতি শতকের শুরুতে দুই স্ট্রোক ইঞ্জিনের অটোরিকশা তুলে দিয়ে রাজধানীতে চার স্ট্রোক ইঞ্জিনের অটোরিকশা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ‘বেবি ট্যাক্সি’ নামে পরিচিত হলুদ রঙের অটোরিকশাগুলোকে বিদায় করে ২০০২ সালে রাস্তায় নামে সবুজ রঙের সিএনজিচালিত অটোরিকশা।

ইঞ্জিনের ‘ইকোনোমিক লাইফ’ হিসাব করে সেই সময় ৯ বছরের জন্য অটোরিকশার লাইসেন্স দেওয়া হলেও মালিক ও চালকদের দাবির কারণে আরো দুই বছর বাড়ানো হয় এই মেয়াদ।

“এই হিসাবে ২০১৩ সাল নাগাদ অধিকাংশ অটোরিকশার লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে”, আইয়ুবুর রহমান বলেন।

এরপর চলাচলের অযোগ্য অটোগুলোকে পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলা হবে এবং যেগুলো চলাচলের উপযোগী আছে- সেগুলোকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে মফস্বলে।

এছাড়া রাজধানীতে মিশুক চলাচল নিষিদ্ধ করায় চালকদের অটোরিকশা কেনার সুযোগ দেওয়া হবে বলে বিআরটিএ চেয়ারম্যান জানান।

তিনি বলেন, “তিন হাজার মিশুক চালককে প্রতিস্থাপন হিসেবে সিএনজি চালিত অটোরিকশা দেওয়া হবে। বিষয়টি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।”

বিআরটিএ’র হিসেব অনুযায়ী, বর্তমানে রাজধানীতে প্রায় ১৩ হাজার সবুজ এবং ৩ হাজার ছাই রংয়ের সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে।

এর মধ্যে সবুজগুলো চলে বাণিজ্যিকভাবে; আর ছাই রংয়েরগুলো ‘ব্যক্তিগত’। মিশুকগুলোকে ‘সিএনজি’ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হলে ভাড়ায় চালিত অটোরিকশার সংখ্যা দাঁড়াবে ১৬ হাজারে।

নতুন করে অটোরিকশার লাইসেন্স দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি জানালেও আইয়ুবুর রহমান বলেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে অটোরিকশ চালকেরা পাঁচ হাজার নতুন লাইসেন্সের আবেদন করে। পরে মালিকরা হাইকোর্টে একটি মামলা করলে বিষয়টি আটকে যায়। বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন।

তিনি বলেন, “সর্বোচ্চ আদালতের রায় চালকদের পক্ষে গেলে নতুন আরো পাঁচ হাজার অটোরিকশার লাইসেন্স দেওয়া হতে পারে।”

এদিকে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা না থাকায় অটোরিকশা চলাচলে নৈরাজ্য দূর করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিবার গ্যাসের (সিএনজি) দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অটোরিকশার ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না কখনোই।

চাহিদার তুলনায় অটোরিকশার সংখ্যা কম হওয়াকে এর মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তারা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক সারোয়ার জাহান  বলেন, “এই খাতের নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো পরিকল্পনা নাই। রাজধানীতে প্রয়োজনের তুলনায় অটোরিকশার সংখ্যা অনেক কম। চালকরা এ সুযোগটি ষোলো আনা নেয়।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হানিফ হোসেন বলেন, ২০০২ সালে দুই স্ট্রোকের ‘থ্রি হুইলার’ বাতিল করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালুর সময় প্রায় ৭০ হাজার চালক বেকার হয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে ২০ হাজার চালক বর্তমানে অটোরিকশা চালাচ্ছেন। আর এর সাথে যুক্ত হয়েছেন ১০ হাজার নতুন চালক।

অর্থাৎ প্রায় ৩০ হাজার চালক পালা করে রাজধানীর প্রায় ১৬ হাজার অটোরিকশা চালাচ্ছেন।

“সরকারি নিয়মে অটো মালিককে ৬০০ টাকা জমা দেওয়ার কথা থাকলেও চালকদের দিতে হচ্ছে ৭৫০ থেকে ১২০০ টাকা। নির্ধারিত ভাড়ায় চলতে গেলে চালকদের না খেয়ে থাকা ছাড়া উপায় থাকবে না।”

ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এটিএম নাজমুল হাসান বলেন, “সিএনজি আর যন্ত্রাংশের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এ কারণে জমা হিসাবে অতিরিক্ত টাকা নিতে মালিকরা একরকম বাধ্য হচ্ছেন।”

অর্থ বাণিজ্য