টিআইএনধারীদের করদানে বাধ্যবাধকতা আসছে

টিআইএনধারীদের করদানে বাধ্যবাধকতা আসছে

আগামী অর্থবছর থেকে টিআইএন নম্বরধারী প্রত্যেককে ন্যূনতম অঙ্কের হলেও কর দিতে হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

শুক্রবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে প্রাক বাজেট আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এই ইঙ্গিত দেন তিনি।

বর্তমানে টিআইএন (কর সনাক্তকরণ নম্বর) ধারীদের কেউ করের আওতায় না থাকলে তিনি কর না দিয়েও থাকতে পারেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “দেশে ২৬ লাখ টিআইএন নম্বরধারী থাকলেও মাত্র ৮ লাখ কর দেন। আমি মনে করি, তাদের সবারই কর দেওয়া উচিৎ।”

এই বাধ্যবাধকতা আগামী অর্থবছর থেকেই হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “হয়তো।”

“অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে রাজস্ব আদায় বাড়ানো এবং কর ফাঁকি বন্ধ করা আমার লক্ষ্য এবং এজন্য আমি সবকিছু করব, ” যোগ করেন মুহিত।

আগামী বাজেটের আকার ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন টাকার কম হবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এতে রাজস্ব খাতে প্রবৃদ্ধি চলতি বছরের মতোই ধরা হচ্ছে এবং বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৪ দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।

সম্পদের ওপর করারোপের পক্ষে নিজের অবস্থান তুলে ধরে ১৯৬৫ সালে তার স্ত্রীর একটি জমি কেনার প্রসঙ্গ তুলে আনেন মুহিত।

“সে (সহধর্মীনি) বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউতে ২০ হাজার টাকা দিয়ে ১৪ কাঠা জমি কিনে আজ পর্যন্ত ওই সময়ের হারে কর দিচ্ছে,” বলেন তিনি।

বৈঠকে অর্থনীতিবিদরা মত প্রকাশ করেন, সরকার প্রণীত ও গৃহীত নারী নীতির সুফল নারীরা পাচ্ছে না। তবে তারা আশা প্রকাশ করেছেন, সরকার এক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

প্রবৃদ্ধি অর্জন প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, এক দশকেরও বেশি সময়ে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।

“প্রবৃদ্ধির উচ্চ হারকে টেকসই করতে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার দরকার। বৈঠকে বিনায়ক সেন এটি বলেছেন এবং অন্যরাও তা সমর্থন করেছেন।”

সরকারের ভর্তুকির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকার বিভিন্ন খাতে নানাভাবে ভর্তুকি দিচ্ছে। তাই ঠিক কত টাকা ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে তা বলা মুশকিল।

“তবে অর্থনীতিবিদরা একটি জাতীয় ভর্তুকি নীতি প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছেন,” বলেন তিনি।

আমদানি ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতার সময় স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা হলেও পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে বিপরীত পদক্ষেপ নেওয়া হয় না বলে অর্থনীতিবিদরা অভিযোগ করেন।

এছাড়া জাতীয় কয়লা নীতি ও বিদেশি সহায়তা ব্যয়ের নীতি নিয়েও সভায় অংশগ্রহণকারীরা কথা বলেন বলে অর্থমন্ত্রী জানান।

নতুন ব্যাংক অনুমোদনের বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “ব্যাংক ৪৮টি থাকুক, আর ৪৯টি থাকুক, সেগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম-নীতি পালন করছে কি না, সেটাই মূল বিষয়।”

আরো নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেওয়া হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আপনারা এই ধরনের সংবাদ শুনতেই থাকবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু এনআরবি ব্যাংকের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মাত্র।”

দেশের পুঁজিবাজারকে প্রকৃত অর্থে স্বাধীন ও স্বনির্ভর করতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। তবে তা বর্তমান নিয়ম-কানুনে সম্ভবপর নয় বলে মনে করেন তিনি।

মুহিত বলেন, “বর্তমান সরকারের মেয়াদে প্রকৃত পুঁজিবাজার গঠন সম্ভব না হলেও দায়িত্ব ছাড়ার আগে আমি এমন কিছু পদক্ষেপ নেব যাতে তা গঠনের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।”

আগামী বাজেটই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকারের শেষ বাজেট হতে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

অর্থ বাণিজ্য বাংলাদেশ