আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা, বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর ইহকালে হেদায়েত ও শান্তি প্রার্থনা, রহমত, মাগফেরাত, নাজাত, ঐক্য এবং বিশ্ব মানবতার কল্যাণ কামনায় শেষ হলো ৫২ তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। মোনাজাতে লাখো মুসল্লির গগন বিদারি কান্নায় প্রকম্পিত হয় তুরাগ তীর।
ইজতেমা ময়দানে দেশি-বিদেশি লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে রোববার বেলা ১১টা ১২ মিনিটে শুরু হয়ে ৩০ মিনিট স্থায়ী এ মোনাজাতে বিশ্ব মুসলিম মানবতার মুক্তি শান্তি ও নাজাত কামনা করা হয়।
গত ২০ জানুয়ারি রাজধানীর উপকণ্ঠে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে শুরু হওয়া দ্বিতীয় পর্বের তিনদিনব্যাপী ইজতেমার আজ ছিল শেষ দিন।
গুনাহ মাফ ও আত্মশুদ্ধির আশায় ‘আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে কান্নার রোল পড়ে যায় তুরাগ তীরে। অশেষ মহিমায় আবেগাপ্লুত হন মুসল্লিরা। অশ্রুসিক্ত নয়নে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণে ব্যাকুল হন অনেক মুসল্লি।
এ মোনাজাত পরিচালনা করেন তাবলীগ জামাতের দিল্লিস্থ মারকাজের শুরা সদস্য, ইসলামি চিন্তাবিদ বিশ্ব মাওলানা সাদ কান্ধলভী। আখেরি মোনাজাতকালে গোটা ইজতেমা ময়দানে যেন এক পুণ্যময় ভূমিতে পরিণত হয়।
মোনাজাতের আগে মাওলানা সাদ ঈমান ও আমলের ওপর বিভিন্ন হেদায়েতি বয়ান দেন। ইজতেমার মুসল্লিদের উদ্দেশে দিক নির্দেশনামূলক বয়ানে মাওলানা সাদ গোটা দুনিয়ায় পথভ্রষ্ট মুসলমানের পাপের ক্ষমা, সঠিক পথের দিশা চেয়ে এবং তাবলিগের কাজে সবাইকে নিয়োজিত হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, দুনিয়ার চেয়ে আখেরাতের প্রতি আমাদের বেশি করে খেয়াল রাখতে হবে। দুনিয়ার জিন্দেগির চেয়ে আখেরাতের জিন্দেগি হলো স্থায়ী। তাই আমাদের ঈমানকে শক্তিশালী করে আখেরাতের জিন্দেগির দিকে ধাবিত হতে হবে। আল্লাহর কাছে কান্না-কাটি করে ক্ষমা চেয়ে পাপমুক্ত হতে হবে। মোনাজাতের সময় গোটা টঙ্গী এলাকা আল্লাহ-আল্লাহ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার পরিবারসহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে বঙ্গভবনের দরবার হলে বসে বিশ্ব ইজতেমার শেষ পর্বের আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানী ঢাকায় গণভবনে বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ এমপি তার বাসভবনে এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের কার্যালয়ে বসে মোনাজাতে শরিক হন।
এছাড়াও মন্ত্রী ও এমপিসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনৈতিক মিশনের সদস্য ও পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারাও মোনাজাতে অংশ নেন।
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দফায় তিনদিনব্যাপী বৃহত্তম এ জমায়েতের শেষ দিনে রোববার ভোর থেকেই আখেরি মোনাজাতে শামিল হতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রাজধানীর আশপাশের মানুষ ইজতেমার ময়দানে আসেন।
ট্রেন, বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, জিপ, কার এবং নৌকাসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে ইজতেমা ময়দানে পৌঁছান লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। যানবাহন ও মুসল্লিদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে বিপুল সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
শনিবার রাত ১২টার পর থেকে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আব্দুল্লাহপুর থেকে আশুলিয়া ব্রিজ পর্যন্ত, চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ইজতেমা ময়দান এবং মিরের বাজার থেকে স্টেশন রোড পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
আখেরি মোনাজাত শেষে যানচলাচল আবার শুরু হবে জানিয়েছেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর-রশিদ। সুষ্ঠুভাবে বিশ্ব ইজতেমার অনুষ্ঠান নিশ্চিত করতে বিপুল সংখ্যক র্যাব, পুলিশ এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
দেশি-বিদেশি লাখো মুসল্লির নিরাপত্তায় ইজতেমা মাঠে ৬ হাজার পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি, বোম ডিস্পোজাল এবং ডগ স্কোয়াড ইউনিট মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি ইজতেমা মাঠে এবং মাঠের কয়েকটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও ওয়াচ টাওয়ার বসিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয় পুরো ইজতেমা ময়দান। প্রতিটি মোড়ে বসানো হয় চারমুখী সিসি ক্যামেরা।
উল্লেখ্য, গত বছর হতে শুরু হয় দেশের ৬৪ জেলাকে চার ভাগ করে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন। মোট ৩২টি করে জেলা নিয়ে দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয় ইজতেমা।
প্রথম পর্বের ইজতেমা শুরু হয় গত ১৩ জানুয়ারি। চলে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। চারদিন বিরতি দিয়ে গত ২০ জানুয়ারি শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নেয় ৯৮টি দেশ থেকে মোট ৯৮ দেশের ১ হাজার ৯২১ বিদেশি।
উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে ১৯৯৬ সালে একই বছর দুইবার বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় এবং মুসল্লিদের চাপ ও দুর্ভোগ কমাতে ২০১১ সাল থেকে দুই পর্বে ইজতেমার আয়োজন করা হচ্ছে।