সংসদের বেতন ভাতা ও আসন রক্ষা করার জন্য বিরোধীদলীয় নেত্রী ও তাদের দল সংসদে এসেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, সংসদের আসন ও বেতন-ভাতা রক্ষা করার জন্যই বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া সংসদে এসে দীর্ঘ ২ ঘণ্টা বক্তব্য দিয়ে চলে গেলেন।
শুক্রবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলকে ধ্বংসাত্মক রাজনীতি পরিহার করার আহবান জানিয়ে বলেন, ধ্বংসাত্মক কর্মকা- বরদাশত করা হবেনা। গত ১৮ ডিসেম্বর ভোর বেলায় তারা বোমাবাজিতে নেমেছিল। এরপরও আমরা তাদেরকে কর্মসূচি পালনে সুযোগ দিয়েছি। ১৮ ডিসেম্বরের পর তাদেরকে মাঠে নামতে দেওয়া ঠিক হয়নি। তারপরও আমরা তাদের বাধা দেইনি।
সভার শুরুতেই সমুদ্রসীমা অধিকার অর্জনে প্রধানমন্ত্রীকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়।
বিরোধী দলের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশৃঙ্খলার পথ ছেড়ে গণতন্ত্রের পথে আসুন। রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে চাইলে করুণ কিন্তু কর্মসূচির নামে বিশৃঙ্খলা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চাইলে বরদাশত করা হবে না।
দলের কার্যনিবাহী সংসদের বৈঠকের উদ্বোধনী বক্তব্যে আগামী নির্বাচনে ভোট প্রত্যাশা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ক্ষমতায় এসে সমুদ্রসীমা নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে কাগজপত্র তৈরি করে অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে আন্তর্জাতিক আদালতে যাই। আমাদের পক্ষে রায় আসায় সমুদ্রসীমায় অতিরিক্ত ১ লাখ ১১ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আশা করি জনগণ আমাদের ভোট দেবে। আবার ক্ষমতায় আসতে পারলে ভারতের সঙ্গে যে মামলা রয়েছে সেটাতেও আমরা বিজয়ী হতে পারব।
মায়ানমারের সঙ্গে মামলায় বিজয়কে দেশের সব মানুষের অর্জন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ গত নির্বাচনে আমাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনে বলেই আমরা সমুদ্রসীমায় আগামী প্রজন্মের জন্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। এটাই বড় কথা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সমুদ্র সীমা নির্ধারনে আইন প্রনয়ন করেন। এরপর যে সরকারগুলো এসেছে এটা নিয়ে কোন উদ্যোগই নেয়নি। আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেই। তখন ১১ বছরের মধ্যে কাগজপত্র জমা দেয়ার সময় ছিলো। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে বিষয়টি নিয়ে কোন কাজই করেনি।
মামলার রায় প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, এই রায়ে সকলেরই (বাংলাদেশ ও মায়ানমার) বিজয় হয়েছে। কারোই পরাজয় হয়নি। দুই দলেরই উইন উইন পজিশন। আমরা প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে বিজয় আনতে পেরেছি।
শেখ হাসিনা অভিযোগ করে বলেন, সমুদ্র বিজয়ের জন্য বিরোধী দলীয় নেত্রী সংসদে গিয়ে সরকারকে ধন্যবাদ দিলেন। আবার বাইরে উনার দলের নেতারা এটা নিয়ে নানান উল্টাপাল্টা কথা বলছেন। আর বলবেনই না কেন! যে যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে তাদের ওঠাবসা, ঘর-সংসার সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে। দুর্নীতি, এতিমের টাকা মেরে খাওয়া, ১০ ট্রাক অস্ত্র আমদানীর বিচার হচ্ছে। এগুলোর সঙ্গে যারা জড়িত তারা নানা অপতৎপরতা শুরু করেবে এটাই স্বাভাবিক।
গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর ভোরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফজরের নামাজের ওয়াক্তে মানুষ যখন নামাজে যাবে তখনই তারা (বিএনপি) বোমাবাজি শুরু করেছে। ১২ মার্চ তারা কর্মসূচির নামে ঢাকা অবরোধ করতে চেয়েছিল। আমরা তাদের কর্মসহৃচিতে বাধা দেয়নি। তারা মিছিল নিয়ে জনসভায় যোগ দিয়েছে। আমরা শুধু আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক করি যাতে অস্ত্র আর বিষ্ফোরক নিয়ে আসতে না পারে। তারা ওইদিন কর্মসূচির নামে বোমাবাজি শুরু করলে তখন মানুষ কী বলত। সরকার হিসেবে তার দায়িত্ব আমাদের ওপর পড়ত। কারণ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আমাদের রয়েছে। তিনি বলেন, ১৮ মার্চ তারা যা করেছিলেন তারপর তাদের মাঠে নামতে দেওয়া ঠিক হয়নি। তারপরও আমরা তাদের মাঠে নামতে দিয়েছি। তারা রোড মার্চ করেছেন। চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে সমাবেশ করেছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রদল শিবির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তাণ্ডব করলো। আমরা সেটা কীভাবে মেনে নিতে পারি। ছাত্রদের জীবন নষ্ট করবে, শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করবে আমরা তা মেনে নিতে পারি না। আমাদের দলের কেউ হলেও আমরা তা মেনে নেইনি। আমরা স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে- দলের হোক আর যেই হোক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবং তা নেয়াও হয়েছে। আর সেখানে শিবির-ছাত্রদল এ ধরনের ঘটনা ঘটালে আমরা বরদাশত করবো কীভাবে?
বিরোধী দল সদস্য পদ আর বেতন ভাতা রক্ষা করতে সংসদে গিয়েছিলেন অভিযোগ করে সংসদ নেতা বলেন, বিরোধী দলীয় নেতা সংসদে গেলেন, আর বাইরে এসে বললেন কথা বলতে দেওয়া হয় না। বিরোধী দলীয় নেতা সংসদে প্রায় দুই ঘন্টা বক্তব্য দিলেন। অথচ আমাকে স্পিকার তত সময় দেননি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার দলের (বিএনপি) এমপিরা সংসদে অশ্লীল ভাষায় কথা বললেন, আমাদের এমপিদের ওপর চড়াও হলেন। স্পিকারের এখতিয়ার রয়েছে, তিনি চাইলে সার্জন এট আর্মস ডেকে তাদের বের করে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি হয়তো চেয়েছিলেন বিরোধী দল সংসদে থাকুক।’