অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে ‘মৃত্যুর সওদাগর’ বলে কথিত রাশিয়ান নাগরিক ভিক্তর বাউতকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে নিউইয়র্কের একটি ফেডারেল আদালত।
কলম্বিয়ার ফার্ক বিদ্রোহীদের কাছে অত্যাধুনিক বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির অভিযোগে তাকে আদালতে অভিযুক্ত করা হয়। এ সময় তাকে দেড় কোটি ডলার জরিমানাও করেন আদালত।
গত বছরের নভেম্বরে তাকে মার্কিন আদালতে আমেরিকান নাগরিক হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকা, বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনকে মদদ দেওয়া এবং অবৈধভাবে বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।
কৌঁসুলিদের দাবি, তিনি ব্যাংককের একটি হোটেলে ফার্ক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় ফার্কের কাছে ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য অত্যাধুনিক ১০০ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৫ হাজার একে-৪৭ রাইফেল বিক্রি করতে রাজি হন।
ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পরবর্তী সময়ে কলম্বিয়া সরকারকে সহযোগিতা দিতে নিয়োজিত মার্কিন পাইলটদের হত্যা করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হতো বলেও কৌঁসুলিরা দাবি করেন এ সময়।
অবশ্য এই দণ্ডের বিরুদ্ধে বাউত আপিল করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
৪৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তিকে থাইল্যান্ডে গ্রেফতার করা হয় ২০১০ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিইএ) এজেন্টরা থাই কর্তৃপক্ষের সহায়তায় ব্যাংককের একটি হোটেল থেকে তাকে আটক করে। কলম্বিয়ার ফার্ক বিদ্রোহীদের কাছে অস্ত্র বেচার অপরাধে তাকে খুঁজছিলো মার্কিন গোয়েন্দারা।
কলম্বিয়ার বামপন্থী বিদ্রোহীদের কাছে ২ কোটি ইউরো মূল্যের অস্ত্র বিক্রি করতে যাচ্ছিলেন তিনি, তার বিরুদ্ধে মার্কিনিদের এটাই ছিলো প্রাথমিক অভিযোগ। এই অস্ত্রের মধ্যে অর্ন্তভূক্ত ছিলো ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র। এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সহজেই যে কোনো মার্কিন সামরিক হেলিকপ্টারকে ভূপাতিত করা সম্ভব।
তাজিকিস্তানে জন্ম নেওয়া ভিক্তর বাউতকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ‘মার্চেন্ট অব ডেথ’ বা ‘মৃত্যুর সওদাগর’ নামে অভিহিত করা হয়। দুই দশক ধরে তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে রক্তাক্ত সংঘাতে লিপ্ত পক্ষগুলোকে অস্ত্র সরবরাহ করছিলেন, এমনই অভিযোগ তার বিরুদ্ধে মার্কিন কর্তৃপক্ষের। রুয়ান্ডা ও অ্যাংগোলা সংঘাতেও নাকি তিনি অস্ত্র জুগিয়েছিলেন।
বলা হয় ২০০৫ সালে হলিউডে মুক্তি পাওয়া নিকোলাস কেজ অভিনীত ‘লর্ড অব দি ওয়ার’ নামের দুর্দান্ত ছবিটি নাকি তার কর্মকাণ্ড অবলম্বনেই তৈরি। সোভিয়েত সেনাবাহিনীর সাবেক অফিসার ভিক্তর বাউত অবশ্য বরাবরই নিজেকে একজন বৈধ ব্যবসায়ী হিসেবে দাবি করে আসছেন।
নিউইয়র্কের ফেডারেল কোর্টে তার চূড়ান্ত শুনানির সময় একজন কৌঁসুলি দাবি করেন, মার্কিনিদের হত্যার জন্য অস্ত্র বিক্রির অভিযোগ বাউত স্বীকার করেছেন। কিন্তু এ সময় চিৎকার করে প্রতিবাদ জানান ভিক্তর। তিনি এটাকে মিথ্যা দাবি করে বলেন, কাউকে হত্যা করা তার উদ্দেশ্য ছিলো না।
ভিক্তরকে প্রথম ‘মার্চেন্ট অব ডেথ’ বা মৃত্যুর সওদাগর নাম দেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের কর্মকর্তা পিটার হেইন। তিনি বলেন,‘বাউত বিশ্বের একজন শীর্ষস্থানীয় ‘মার্চেন্ট অব ডেথ’, যিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন বিশ্বের প্রধান একটি অস্ত্র সরবরাহ রুট। অস্ত্র সরবরাহের এই রুট বিস্তৃত ছিলো বুলগেরিয়া, মলদোভিয়া ও ইউক্রেনসহ পূর্ব ইউরোপীয় রাষ্ট্র থেকে শুরু করে আফ্রিকার সংঘাত কবলিত লাইবেরিয়া ও অ্যাংগোলা পর্যন্ত।’
দণ্ডাদেশ দেওয়ার সময় আদালত বলেন, ‘যদিও বাউত নিজেকে সব সময় একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিতেন। কিন্তু আসলে তার ব্যবসা ছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক পণ্য সরবরাহের।’
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বাউতের আইনজীবী আলবার্ট দায়ান বিচারকের কাছে লেখা চিঠিতে দাবি করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তাকে টার্গেট করেছে কারণ, বাউতের কোম্পানি ইরাক যুদ্ধের সময় মার্কিন ঠিকাদারদের কাছে বিভিন্ন পণ্য সরবরাহে নিয়োজিত ছিলো, আর এটাই ছিলো হোয়াইট হাউসের দুশ্চিন্তার মূল কারণ।