আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারের ব্যক্তিগত গাড়িচালক হওয়ায় অপহৃত হয়েছিলেন ইব্রাহীমও। পরে অন্য ছয়জনের সঙ্গে তার মরদেহও মেলে শীতলক্ষ্যা নদীতে। আজ তিনবছর পর ইব্রাহীম হত্যায় জড়িতদের ফাঁসির সংবাদে গগণ-বিদারি কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা।
রায়ের পর কান্নাজড়িত কণ্ঠে ইব্রাহীমের স্ত্রী মাহমুদা বলছিলেন, ‘কতো কথা শুনেছি। সহ্য করেছি মুখ বুজে। অনেকের চোখ রাঙানিও হজম করেছি। সত্যের জয় হবে এই আশায়। সন্তানদের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। একেকটা দিন যেন একেকটা বছর পেড়িয়ে এসেছি। মন সব সময় সায় দিয়েছে হত্যাকারীরা নিস্তার পাবে না। আজকে তাই সন্তান, ভাই-বোন-বাবাকে নিয়ে আদালতে হাজির হয়েছি।’
ইব্রাহীমের বাবা আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ‘আজ রায় হবে এমন খবরে ছুটে এসেছি। হত্যাকারীরা আমার নিরাপরাধ সন্তানকেও অপহরণ করেছিল। তাদের শাস্তির রায় শোনাটা শেষ বয়সেও অপেক্ষায় থেকেছি। আল্লাহর শোকরিয়া।’
ইব্রাহীমের ছোট্ট মেয়ের মুখে ভাষা নেই। শুধুই চোখ দিয়ে ঝরছিল পানি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিল, ‘আমার বাবা ছিল ড্রাইভার। কতোজনে বলেছে ড্রাইভার হত্যার আবার বিচার হয় নাকি? শুনেই কান্না চলে আসতো। গরিবদের কি বিচার হবে না? ভয়ে থাকতাম।’
উল্লেখ্য, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ১১-এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট (চাকরিচ্যুত) কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, চাকরিচ্যুত কমান্ডার এম এম রানা ও চাকরিচ্যুত মেজর আরিফসহ মোট ২৬ জনের ফাঁসি ও অন্য ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির আদেশ দেন আদালত। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন এই রায় ঘোষণা করেন।
গত ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের খান সাহেব ওসমানী স্টেডিয়ামের সামনে থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম অপহৃত হন।
পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের ও ১ মে একজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় দুটি মামলা হয়। একটি মামলার বাদী নিহত অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল। অপর মামলার বাদী নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি।
দুটি মামলার তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল নূর হোসেন, র্যা বের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এতে দুটি মামলায় সাক্ষী করা হয় ১২৭ জন করে।