ওয়ানডে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। আজকাল বিজ্ঞাপন, বাণিজ্য ও বিপনের মিশেলে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটও পেয়েছে বেশ দর্শকপ্রিয়তা। কিন্তু হারায়নি টেস্ট ক্রিকেটের ঔজ্জ্বল্য। চিরায়ত সৌন্দর্য্য ও ঐতিহ্য নিয়ে ঠিক টিকে আছে টেস্ট ক্রিকেট। পাঁচদিনের খেলা। পরতে পরতে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের মত উত্তেজনা, আকর্ষণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়তো নেই। টেস্টের সৌন্দর্য্য। ভিন্ন। একেক সেশনে একেক রকম চালচিত্র। কখনো শীতল। আবার কখনো উষ্ণ। ওঠা নামার পালাও অনেক বেশি।
মোদ্দা কথা সীমিত ওভারের খেলার তুলনায় পরিধি, আকার ও দীর্ঘ পরিসরের খেলা বলে টেস্টে ঘটনা প্রবাহও অনেক বেশি। তাই পৃথিবীর তাবৎ খেলার তুলনায় টেস্ট ম্যাচের ইতিহাস ও পরিসংখ্যান নিয়ে ঘাটাঘাটি, কথা বার্তা, আলোচনা-পর্যালোচনা ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণও হয় অনেক বেশি। সেই আলোকেই বলা টেস্ট ক্রিকেটের রেকর্ড নিয়ে যত কথা বার্তা হয় এবং আলোচনা ও পর্যালোচনা হয়, অন্য কোন খেলার অন্য কোন ফরম্যাট নিয়ে তা হয় না। বলা যায় টেস্ট ক্রিকেটের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য তার রেকর্ডের পাতায়। তার পরিসংখ্যানে।
টেস্টের এই পরিসংখ্যান ঘেটেই বেড়িয়ে আসলো এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। কোনরকম ভনিতা না করেই বলে দেয়া ভালো, এ তথ্যটা বাংলাদেশ দলের জন্য মোটেই কৃতিত্বের নয়। বরং চরম ব্যর্থতার। গ্লানিরও।
টেস্ট ক্রিকেটের ১৪০ বছরের দীর্ঘ ইতিহাসের বিরলতম ঘটনার জন্ম হলো আজ ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে। যে মাঠে মাত্র দু`দিন আগে নতুন নতুন রেকর্ড গড়ে নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়া। পঞ্চম উইকেটে সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহিমের ৩৫৯ রানের বিশাল রেকর্ড গড়ে শুধু নিজ দেশের টেস্টে সবচেয়ে বড় পার্টনারশিপের রেকর্ড গড়েননি। ঐ জুটিতে ৩০০ পেড়িয়ে যেতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে যে কোন উইকেটে সবচেয়ে বড় জুটিরও মালিক বনে যান সাকিব-মুশফিক।
সেই বেসিন রিজার্ভে অবশেষে ব্যর্থতার এক নতুন ইতিহাসেরও জন্ম হলো। সে ব্যর্থতার স্রষ্টাও টাইগাররা। এ মাঠে বাংলাদেশ শুধু রান পাহাড় গড়ে হারেনি। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪০ বছরের সুদীর্ঘ ইতিহাসে প্রথম ও একমাত্র দল হিসেবে ৫৯৫ রানের হিমালয় সমান স্কোর গড়ে হারা প্রথম দলও হলো বাংলাদেশ। এ দীর্ঘ ইতিহাসে এর আগে কোন দলের ৫৯৫ রানের হিমালয় সমান স্কোর নিয়েও হারের রেকর্ড ছিল না।
আজ ১৬ জানুয়ারী সে ব্যর্থতার নতুন মাইলফলক স্পর্শ করলো মুশফিকের দল। প্রথম দল হিসেবে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৬০০ রানের দোরগোড়ায় পৌঁছেও শেষ পর্যন্ত ম্যাচ হারের তেঁতো স্বাদ নিলো তামিম, ইমরুল, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ।
এর আগে টেস্টের প্রথম ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ৫৮৬ রান করে ম্যাচ হারের রেকর্ড ছিল অস্ট্রেলিয়ার। সেটা বহু দিন আগের কথা। সেই ১৮৯৪ সালে সিডনিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে ৫৮৬ রানের পাহাড় সমান স্কোর গড়েও শেষ পর্যন্ত ম্যাচ হারে অজিরা। টেস্টে ক্রিকেটে প্রথম ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৫৬ রান করে হারের রেকর্ডটাও অস্ট্রেলিয়ার। ২০০৩ সালে ঘরের মাঠে এডিলেডে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে ঐ রান করেও ম্যাচ জিততে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। হারের তেঁতো স্বাদ নিয়েই মাঠ ছাড়ে।
টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে তৃতীয় সর্বাধীক ৫৫১ রান তুলে হারের রেকর্ডটা ইংল্যান্ডের। সেটা ২০০৬ সালের ঘটনা। অ্যাডিলেডে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৬ উইকেটে ৫৫১ রান তুলে ইনিংস ঘোষণার পর উল্টো হেরে যায় ইংলিশরা। এছাড়া টেস্টের প্রথম ইনিংসে বড় স্কোর গড়ে ম্যাচ হারার রেকর্ড আছে আরও কয়েকটি।
এর মধ্যে ১৯৬৮ সালের মার্চে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ হেরেছিল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। পোর্ট অফ স্পেনে হওয়া সে ম্যাচে ক্যারিবীয়রা আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ৫২৬ রান তুলে ইনিংস ঘোষনা করেও শেষ অবদি ম্যাচ হেরে যায়। এছাড়া প্রথম ইনিংসে ৫২০ এবং ৫১৯ রান করেও টেস্ট হারের রেকর্ড আছে একজোড়া। প্রথম ইনিংসে ৫২০ রান তুলেও শেষ পর্যন্ত টেস্ট হারের রেকর্ডটি অস্ট্রেলিয়ার। ১৯৫৩ সালে মেলবোর্নে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে ৫২০ রানের বড় স্কোর গড়েও কুলিয়ে উঠতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচ জিতে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। এছাড়া ৫১৯ রান করে টেস্ট হারের রেকর্ডটি ইংল্যান্ডের। আজ থেকে অনেক আগে সেই ১৯২৯ সালের মার্চে মেলবোর্নে অজিদের সাথে ঐ বড় স্কোর গড়ার পরও শেষ পর্যন্ত হার মানে ইংলিশরা।