‘বাজারত হামার আলুর দামই নাই’

‘বাজারত হামার আলুর দামই নাই’

‘এবার অনেক আশা নিয়া আলু লাগাইনো। আলু তুলি বাজারত নিগাইলে (নিয়ে গেলে) হামার (আমার) আলুর দামই নাই। টাকা খরচ করে আলু আবাদ করি যদি দাম না পাই, কার মাথা ঠিক থাকে বলেন তো বাহে।’

এ ভাবেই কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তিস্তা চরের শংকরদাও গ্রামের আলু চাষি মোজ্জাফর আলী (৫০)।

লালমনিরহাট জেলার তিস্তার তীরবর্তী বালু চরে আগাম জাতের আলু চাষ করে দাম না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। গত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তিস্তার বালু চরে আগাম জাতের আলু চাষ করেন। বাম্পার ফলন হলেও দাম না পাওয়ায় অনেক আলু চাষি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অনেকে ঋণ নিয়ে আলু চাষ করায় ঋণের টাকা পরিশোধ করতে কমদামে আলু বিক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছেন।

Lalmonirhat

সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে আলুর স্তূপ পড়ে আছে। আলু কেনার ক্রেতা নেই বললেই চলে। বাজারে আলু খুচরা বিক্রয় হচ্ছে প্রতি কেজি ছয় থেকে আট টাকা দরে।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায়  চার হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ এক হাজার ২৪৩ মেট্রিক টন। গত বছর উৎপাদন হয়েছে ৯৯ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন আলু।

বাজারে নতুন আলু ওঠার শুরুতে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও দিন দিন বাজার দর নিম্নমুখী হতে থাকে। গত এক সপ্তাহ ধরে আলু বাজার প্রতি ছয় থেকে আট টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি জমির খেত থেকে প্রতি বস্তা আলু বিক্রয় হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।

কালীগঞ্জ উপজেলার আমিনগঞ্জ শংকর দাও তিস্তা চরের সাদেকুল ইসলাম জানান, ৫০ শতক জমিতে আলু চাষ করে খরচ হয়েছে ২৬ হাজার টাকা শ্রমিক ও পরিবহন খরচসহ আলু বিক্রয় করেছেন মাত্র ১০ হাজার টাকা। বাকী ১৬ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হয়েছে।

তিনি আরও জানান, তিস্তা চরের অনেক আলু চাষি আলু চাষ করে লোকসানে পড়েছেন। গত বছর ভালো দাম পাওয়া গেলেও এবার আলুর আসল দামেই পাওয়া যাচ্ছে না।

লালমনিরহাট কৃষি অধিদফরের উপ-পরিচালক বিধুভূষণ রায় জানান, তিস্তা নদীর তীরবর্তী ও লালমনিরহাট সদর উপজেলায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর চাষবাদ এবং উৎপাদন হয়েছে দ্বিগুণ। আমরা আশা করি আলু চাষ করে কৃষকরা লাভবান হোক।

Lalmonirhat

জেলা সংবাদ