প্রতারণার মামলায় আদালতের সঙ্গেও প্রতারণা করে জালিয়াতির মাধ্যমে জামিন নিয়ে ফেঁসে গেলেন ডেভলপার প্রতিষ্ঠান আশিয়ান সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম ভুঁইয়া। নিজে বিদেশে গিয়ে ভূয়া ব্যক্তিকে নিজের নামে আদালতে আত্মসমর্পণ করিয়ে জামিন করিয়ে নেন তিনি। পরে বাদি পক্ষ বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করলে ঘটনার সত্যতা সম্বন্ধে নিশ্চিত হন আদালত।
ঢাকা মহানগর হাকিম আব্দুস সালাম রোববার জামিন বাতিল করে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। একই অপরাধে এ মামলার অপর আসামি নজরুলের ভাই জাহিদুল ইসলাম ও আশিয়ান সিটির সুপারভাইজার মো. মনিরের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
প্রতারণার মাধ্যমে ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আশিয়ান সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম, তার ভাই জাহিদুল ইসলাম ও সাইফুল ইসলামসহ প্রতিষ্ঠানটির ৬ কর্মকর্তা-কর্মচারির বিরুদ্দে গত ২৬ অক্টোবর ঢাকার একটি আদালতে মামলা করেন রাজধানীর দক্ষিণ খান থানার মধুবাগের বাসিন্দা শেখ সিদ্দিকুর রহামনের ছেলে শেখ সেলিম।
পরদিন শুনানি শেষে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর ঈদ-উল আযহার ছুটির পরদিন ৯ নভেম্বর আসামিদের মধ্যে নজরুলের ভাই সাইফুল ইসলাম, আশিয়ানের সাইট অফিস-১ এর ম্যানেজার মো: জহির ও সাইট অফিস-২ এর ম্যানেজার জুলফিকার আলী বাবলু আদালতে আত্মমর্পণ করেন। একইসময় ভাড়া করা ব্যক্তিদের হাজির করে নজরুল ইসলাম, তার ভাই জাহিদুল ইসলাম ও সুপারভাইজার মো: মনিরকে আদালতে আত্মসর্মপণ দেখানো হয়। অথচ ওই সময় নজরুল ইসলাম বিদেশ ভ্রমণে, জাহিদুল ইসলাম ও মনির হজ পালনের নামে সৌদি আরবে অবস্থান করছিলেন। প্রকৃত আসামিদের অনুপস্থিতিতে জামিন মঞ্জুর হওয়ার বিষয়টি জানার পর বাদিপক্ষ সার্বিক তথ্য সংগ্রহ করেন। সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে আসামিদের জামিন বাতিল চেয়ে গত ১৬ নভেম্বর আদালতে আবেদন করেন বাদিপক্ষ।
আবেদনে বলা হয়, আসামিরা ভূয়া ব্যক্তিদের আদালতে হাজির করে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করে জামিন নিয়েছেন। এক্ষেত্রে আসামিদের আইনজীবী শরিফুল ইসলাম উজ্জ্বলও এ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত বলেও আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
শুনানি শেষে আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়, আসামিদের জামিন বাতিল চেয়ে বাদীপক্ষের করা আবেদন অত্যন্ত গুরুতর। তাই, আসামিদের উপস্থিতিতেই বিষয়টি শুনানি করা উচিত। এ অবস্থায় নজরুল ইসলামসহ জামিন-প্রতারণায় জড়িত তিন আসামি ও তাদের জামিনদারদের নিয়ে আদালতে হাজির হতে আইনজীবী শরিফুল ইসলাম উজ্জ্বলের প্রতি নির্দেশ জারি করেন আদালত। নির্দেশ অনুযায়ী রোববার তাদের হাজির হওয়ার কথা ছিল। তারা হাজির না হওয়ায় জামিন জালিয়াতির অভিযোগে ওই তিন আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করতে পুলিশের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়।
শেখ সেলিমের দায়ের করা মূল মামলায় অভিযোগ করা হয়, আসামিরা ডেভলপার প্রতিষ্ঠান আশিয়ান সিটির মাধ্যমে জায়গা (প্লট) বিক্রির ব্যবসার নামে বিভিন্ন নিরীহ লোকজনের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে। একপর্যায়ে শেখ সেলিমের মালিকানার দক্ষিণখান মৌজার ১০ কাঠা জমিসহ একতলা বাড়ি কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেন আশিয়ানের পরিচালক নজরুল ইসলাম ও আশিয়ানের অপর ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারি। তাদের প্রতিশ্র“ত মূল্যে ওই জমি বিক্রি করতে সম্মত হন শেখ সেলিম। বিক্রির রেজিস্ট্রি দলিল করার পরও পাওনা পরিশোধ না করে দেই-দিচ্ছি বলে টালবাহানা করতে থাকে আশিয়ান সিটি কর্তৃপক্ষ। এরপর শেখ সেলিমের নামে ওই পাওনা টাকার চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী স্বীকারোক্তিমুলক একটি দলিল করে দেন আশিয়ানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম।