ডিএনসিসি মার্কেট ব্যবসায়ীরা এখন হকার

ডিএনসিসি মার্কেট ব্যবসায়ীরা এখন হকার

সুসজ্জিত শোরুম। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দোকান। লাখ লাখ টাকার পণ্য সামগ্রির পসরা। নামি ব্রান্ডের সমারোহ। জমজমাট ব্যবসা। ঠিকঠাকমতো সবই চলছিল। হঠাৎ দুর্ঘটনা। সব শেষ…। আগুনে পুড়ে গেছে সব স্বপ্ন। বসতে হয়েছে পথে। একেবারে হকারের মতো। রাস্তায়…।  এটা রাজধানী ঢাকার গুলশান-১ এর ডিএনসিসি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের চিত্র। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এই ব্যবসায়ীরা এখন হকার হয়ে খোলা আকাশের নিচে পণ্য বিক্রি করছেন।

গোডাউনে জমা থাকা কিছু মালামাল নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন আগুনে পুড়ে বিধ্বস্ত হওয়া সেই মার্কেটের মাঠেই। আবার ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন তাদের।

শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এ চিত্র। তবে তাদের সঙ্গে সেখানে এবার যোগ হয়েছে বহিরাগত হকাররাও। সার্বিক অবস্থা দেখে যে কারও মনে হবে এ যেনো গ্রামের কোনো সাপ্তাহিক হাট।

hokar

এদিকে এখান থেকে কিছুটা কম দামে পণ্য সামগ্রী কেনার আশায় আশপাশের বাসিন্দারা ভিড় জমালেও মূলত তারা দামে ছাড় পাচ্ছেন না।

শুক্রবার দুপুরে পুড়ে যাওয়া মার্কেটের সামনে গিয়ে দেখা গেছে- কয়েক শত ব্যবসায়ী তাদের পণ্যসামগ্রী নিয়ে হকারের মতো মাঠে বসেছেন। তবে মাঠের এসব ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই বহিরাগত বলে দাবি অন্য ব্যবসায়ীদের। তাছাড়া যাদের দোকানের কোনো ক্ষতি হয়নি তারাও দোকানের পাশাপাশি মাঠের কিছু জয়গা দখল করে ব্যবসা শুরু করেছেন। এতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

গুলশান মার্কেটের বিধ্বস্ত হওয়া অংশের ব্যবসায়ী হাজী নুরুল ইসলাম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের একটি ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর দোকান ছিল। কিছু মাল উদ্ধার করতে পেরেছি। অনেক মালামাল ক্ষয় হয়েছে। আমরা সেই মালামাল নিয়েই ব্যস্ত। এখন পুড়ে যাওয়া অন্য দোকান মালিকরা মার্কেটের সামনের কার পার্কিংয়ের জায়গায় বসার সিদ্ধান্ত নেয়। কয়েকজন বসতে না বসতেই বহিরাগতরা এসে অধিকাংশ জায়গা দখল করে ব্যবসা শুরু করে।

hokar

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, যাদের দোকানের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি তারাও মাঠের বিশাল জায়গা দখল করে দোকানদারি শুরু করেছে। আমরা যারা ক্ষতিগ্রস্থ তারা ক্ষতিগ্রস্থই থেকে গেলাম। বহিরাগত হকারদের উঠেয়ে দেয়ার জন্য উপস্থিত পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ করলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে কয়টি দোকান বিধ্বস্ত হয়েছে তাদের অধিকাংশই মার্কেটের মাঠে স্থান পায়নি। বহিরাগত অনেক কাপড়, পোশাক বা শীতবস্ত্র ব্যবসায়ীরা মাঠ দখল করে ব্যবসা শুরু করেছেন। যারা নগরীর বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতে বসে ব্যবসা করতেন। ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তারা ঢুকে পড়েছেন এ মার্কেটে।

hokar

জানতে চাইলে জাহান নামে একজন ব্যবসায়ী জানান, ডিসিসি মার্কেটে তার কোনো দোকান নেই। তিনি সন্ধ্যার পর রামপুরা ব্রিজের ওপরে খোলা ভ্যানে করে টি-শার্ট ও শীতের বস্ত্র বিক্রি করেন। এই মার্কেটে হকার বসছে জানতে পেরে দুপুরের পর চলে আসেন। কেউ তাকে বাধাও দেয়নি।

এদিকে কম দামে পণ্যসামগ্রী কেনার আশায় গুলশান ও তার আশপাশের বাসিন্দাদের ভিড় জমলেও মূলত দামে কোনো ছাড় দেখা যাচ্ছে না। এখানকার বাসিন্দারা ডিএনসিসি মার্কেটের খাঁটি মালামাল চিন্তা করে পণ্য কিনলেও মানের দিক থেকে প্রতারিত হচ্ছেন।

ক্রেতাদের এমন দৃষ্টিকে কাজে লাগিয়ে মানহীন পণ্য গছিয়ে দেয়া হচ্ছে। অনেকেই ৫০০ টাকার জিনিস মাত্র ২০০ টাকা কিংবা দুই হাজার টাকার জিনিস মাত্র এক হাজার টাকাসহ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্রি শুরু করেছেন। ক্রেতারাও ভিড় করছেন সেসব দোকানে।

বাংলাদেশ