প্রাকৃতিক ঝুঁকির বীমাদাবি পূরণে অক্ষম দেশীয় কোম্পানি

প্রাকৃতিক ঝুঁকির বীমাদাবি পূরণে অক্ষম দেশীয় কোম্পানি

প্রাকৃতিক দুর্যোগে সৃষ্ট বড় ধরনের বীমাদাবি পূরণের সক্ষমতা নেই দেশীয় বীমা কোম্পানিগুলোর। তাই সম্মিলিতভাবে এ ধরনের বীমা দাবি পরিশোধের উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের কাছে একটি বিশেষ ফান্ড গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে বেসরকারি এক বিমা কোম্পানি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিআইএকে দেওয়া ওই বীমা কোম্পানির চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে দেশের বীমাদাবি পূরণের সক্ষমতা দেশের বীমা কোম্পানিগুলোর নেই।

জানা গেছে, গত ১ এপ্রিল থেকে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, ভুমিকম্প, সুনামির মতো ঘটনায় গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হলে এ ধরণের একটি ক্ষতির বিপরীতে সর্বোচ্চ ১০০ কোটি টাকার বেশি দাবি পরিশোধ করবে না বিদেশি বীমা কোম্পানি। গ্রাহকের দাবি ১০০ কোটি টাকার বেশি হলে বাকি টাকা সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে দিতে হবে।

বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি বিষয়ক বীমা পলিসির পুর্ণবীমা সাধারণ বীমা করপোরেশনের (এসবিসি) সঙ্গে করে থাকে। এসবিসি পরবর্তীতে তা বিদেশি পুর্ণবীমা কোম্পানিগুলোর কাছে আবার পুর্ণবীমা করতো।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বীমাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এক দিনের বা একই ঘটনায় সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের সীমা ১০০ কোটি  নির্ধারণ করে দেওয়ায় সাধারণ বীমা করপোরেশনও (এসবিসি) একইভাবে ক্ষতিপূরণের সর্বোচ্চ সীমা ১০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করে দেয়। ফলে ১০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হলে বা এর বেশি বীমাদাবি থাকলে সেসব বীমাদাবি দেশীয় কোম্পানিগুলোকে পরিশোধ করতে হবে।

পক্ষান্তরে বর্তমানে দেশে মোট সাধারণ বীমা কোম্পানির সংখ্যা ৪৪টি। কিন্তু, এসব কোম্পানির বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক ঝুঁকিজনিত পলিসি রয়েছে। এক একটি কোম্পানির প্রাকৃতিক ঝুঁকিজনিতকারণে সৃষ্ট ক্ষতির বিপরীতে অন্তত কয়েকশ’ কোটি টাকার বীমাদাবি পূরণ করতে হবে। এমতাবস্থায় বড় ধরনের ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্পের মত ঘটনায় ক্ষতির বিপরীতে বীমাদাবি পূরণ করার মত সক্ষমতা দেশীয় বীমা কোম্পানিগুলোর নেই।

উদ্ভূত এ সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পক্ষ থেকে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় বিষয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয় বিআইএকে। ওই চিঠিতে সামগ্রিক বিষয় উল্লেখ করে বীমাদাবি পূরণের লক্ষ্যে সব সাধারণ বীমা কোম্পানির সমন্বয়ে একটি বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়।

ওই চিঠির প্রেক্ষিতে গত ২ এপ্রিল বিআইএ কার্যালয়ে সংগঠনটির নির্বাহী কমিটির এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে বিষয়টি নিয়ে সকল সাধারণ বীমা কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করতে আগামী ৮ এপ্রিল সকল সাধারণ বীমা কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক আহ্ববান করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিআইসিএল) অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘সম্প্রতি আন্তর্জাতিক পুর্ণবীমাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো একটি ঘটনায় সর্বোচ্চ বীমাদাবি ১০০ কোটি টাকা পূরণ করবে বলে জানিয়েছে। যা চলতি মাস থেকে কার্যকর হয়েছে। এ বিষয়ে সম্প্রতি বিআইএ’র এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে আগামী সপ্তাহে।

এ প্রসঙ্গে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আখতার আহমেদ বলেন, সেরকারি বীমা কোম্পানিগুলো বৈদেশিক বীমা কোম্পানির সঙ্গে শত শত কোটি টাকার পূন:বীমা চুক্তি করেছে। এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা আছে বলে তার জানা নেই। তবে প্রতিবেশি দেশ ভারতে বেশ কয়েকটি পুন:বীমা কোম্পানি রয়েছে তারা এ ধরণের শর্ত জুড়ে দিতে পারে।

অর্থ বাণিজ্য