তৃতীয় শ্রেণির বইয়ে বঙ্গবন্ধুর মায়ের নাম ভুল

তৃতীয় শ্রেণির বইয়ে বঙ্গবন্ধুর মায়ের নাম ভুল

প্রাথমিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ে অধ্যায় ১০ এ ‘আমাদের জাতির পিতা’ নামে উপ-শিরোনামে আলোচনা করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ও সংগ্রামী জীবন। প্রথম প্যারায় শেষ লাইনে উল্লেখ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাবা শেখ লুৎফর রহমান ও মায়ের নাম-সায়েরা বেগম।

এখানে বাবার নাম সঠিক হলেও মায়ের নাম ভুল লেখা হয়েছে। তাঁর মায়ের সঠিক নাম সায়েরা খাতুন, এই নামটি ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ তে শেখ মুজিবুর রহমান নিজের লেখায় উল্লেখ করেছেন।

তৃতীয় শ্রেণির এই বইয়ের রচনা ও সম্পাদনায় ছিলেন ড. মাহবুবা নাসরীন, ড. আব্দুল মালেক, ড. ইশানী চক্রবর্তী, ড. সেলিনা আক্তার। পরিমার্জনে ছিলেন- লানা হুমায়রা খান, মো. মোসলে উদ্দিন সরকার, মো. মোস্তফা সাইফুল আলম, মো. আবু সালেক খান।

এ ঘটনায় এনসিটিবির তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এনসিটিবির আর্টিস্ট কাম ডিজাইনার সুজাউল আবেদিনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। এর আগে প্রধান সম্পাদক প্রীতিশ কুমার সরকার ও ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ লানা হুমায়রা খানকে ওএসডি করা হয়।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) তথ্যানুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের ক্ষেত্রে চুড়ান্ত পাণ্ডলিপি অনুমোদন দেয় প্রাথমিক স্তরের ন্যাশনাল কারিকুলাম কমিটিতে (এনসিসি)। এই কমিটির প্রধান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব। সে অনুযায়ী বইয়ে ভুলভ্রান্তির দায় এই মন্ত্রণালয়ের উপরও বর্তায়। তবে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন থেকে ছাপা হওয়ার মধ্যে দীর্ঘ সময়ের মধ্যে পরিবর্তন হয়েছে মন্ত্রণালয়ের সচিব।

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, এনসিটিবি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ধীন প্রতিষ্ঠান। ওখানে নামকাস্তে প্রাথমিক শাখা রয়েছে। পৃথক এনসিটিবি না হওয়ায় এ ধরনের ভুলভ্রান্তি চলে এসেছে পাঠ্যবইয়ে। পাঠ্যবইয়ে ভুলের বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তদন্ত কিংবা কোনো পরিমার্জনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কী না- এমন প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা জানান, এনসিটিবির চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছেন, কোথায়-কোথায় ভুল এসেছে তা জানাতে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি করার কথা উল্লেখ করে বলেন, গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো তদন্ত কমিটি করার দরকার নেই।

আরো যত ভুলঃ প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে বর্ণ পরিচয়ে লেখা হয়েছে, ‘ও’-তে ওড়না চাই; যা নিয়ে ফেইসবুকে চলছে তুমুল সমালোচনা। একই বইয়ে শুনি ও বলি পাঠে একটি ছাগলের ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে, অজ (ছাগল) আসে। আম খাই। আম খাওয়া বোঝাতে একটি আম গাছের নিচের অংশে দুই পা তুলে একটি ছাগলের দাঁড়িয়ে থাকায় ছবি দেয়া হয়েছে, যা নিয়ে ফেইসবুকে চলছে হাস্যরস।

বইটির সংকলন, রচনা ও সম্পাদনায় ছিলেন- শফিউল আলম, মাহবুবুল হক, সৈয়দ আজিজুল হক, নূরজাহান বেগম। পরিমার্জনে ছিলেন- শফিক আহমেদ শিবলী, গৌরাঙ্গ লাল সরকার, মো. তৈয়বুর রহমান, নাছিমা বেগম এবং উত্তম কুমার ধর। তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ের সংকলন, রচনা ও সম্পাদনায় এবং পরিমার্জনে এরাই ছিলেন। কিন্তু এখানে নামের আগে ডক্টরেট ডিগ্রি লিখেছেন মাহবুবুল হক, সৈয়দ আজিজুল হক এবং নাছিমা বেগম। ডক্টরেট ব্যবহার নিয়ে বিভ্রাটে পাঠক।

তৃতীয় শ্রেণির ‘হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’ বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ‘কাউকে কষ্ট দিও না- এর ইংরেজি লেখা হয়েছে- DO NOT HEART ANYBODY. আঘাত করা বোঝাতে গিয়ে Hurt বানান লিখতে ভুল হয়েছে; তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে কুসুমকুমারী দাশের ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতায় বেশ কয়েকটি লাইন বিকৃত করা হয়েছে।

মূল কবিতায় আছে ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে’। আর বইয়ে ছাপা কবিতায় লেখা হয়েছে ‘আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে?’ এছাড়া ‘মানুষ হইতে হবে- এই তার পণ’ এর বদলে লেখা হয়েছে ‘মানুষ হতেই হবে’। অষ্টম শ্রেণির গল্পের বই আনন্দপাঠে সাতটি গল্পের সবগুলোই বিদেশি লেখকের গল্পের বাংলা অনুবাদ। দেশি লেখকের কোনো গল্প সেখানে না থাকায় সমালোচনা হচ্ছে।

এছাড়া, ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে প্রথম অধ্যায়ে ‘বাংলাদেশের ইতিহাস’ শিরোনামে ১৯৪৭-১৯৭১ সালের পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ জন্মের ইতিহাস আলোচনা হয়েছে। দশ পৃষ্ঠার দীর্ঘ আলোচনায় কোথাও বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির ঐতিহাসিক ৭মার্চের ভাষণ উল্লেখ করা হয়নি। এই বিষয়টি স্থান হয়নি ৭ম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ের ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম’ শিরোনামে অধ্যায় এক-এ।

প্রাথমিক স্তরে বইয়ের ভুলের দায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল কারিকুলাম কমিটির হলেও ছাপানোর দায়িত্ব প্রতিষ্ঠান ছিল এনসিটিবি। এনসিটিবির দায়িত্ব অবহেলা তদন্ত পূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর