রাজধানীর বনানীর ‘বসতি হরাইজন’ নামক ভবনে অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ হিসেবে তদারকি ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতি পেয়েছেন পরিবেশবাদীদের একটি প্রতিনিধি দল। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তারা এমন দাবি করেছেন।
গত ৯ জানুয়ারি ‘বসতি হরাইজন’ ভবনে অগ্নিকাণ্ডের পর বুধবার পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহনের নেতৃত্বে ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিন পরিদর্শন করে। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন-পবার সহ-সম্পাদক স্থপতি শাহীন আজিজ, সদস্য ক্যামেলিয়া চৌধুরী, মো. মাসুম হোসেন, মো. ইব্রাহিম ও পবার প্রোগ্রাম অফিসার তানভির মাসুম।
পরিদর্শনকালে প্রতিনিধি দল সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখেছে, বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর জেনারেটর চালু করায় গাড়ি ওঠা-নামানোর কাজে ব্যবহৃত লিফটের হাইড্রোলিক সিস্টেম বিস্ফোরিত হয়ে বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে ২য় তলায় বিদ্যুতের মূল সংযোগ বোর্ডে আগুন লাগে। বিদ্যুৎতের মূল সংযোগের জন্য সাব-স্টেশন থাকা অত্যাবশ্যক। কিন্তু এ ভবনে কোনো সাব-স্টেশন নেই এবং বিদ্যুতের মূল সংযোগ বোর্ড দেয়ালের সঙ্গে লাগানো। ভবনটিতে ভেন্টিলেশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে সঙ্গে ধোঁয়া সিড়ি ও লিফটের পথে উপরে ওঠে যায় এবং ভবনটি ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে যায়। অগ্নিকাণ্ড সংগঠিত হওয়ার পর ভবনটি ধোঁয়াচ্ছন্ন হওয়ায় এবং জরুরি নির্গমনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ভবনটিতে অবস্থিত সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং দিগ-বিদিক ছোটাছুটি করেন।
এতে আরও দেখা গেছে, তৃতীয় তলা পার্কিংসহ বাণিজ্যিক ভবনটি মোট ২১ তলাবিশিষ্ট। ভবনটিতে ৩টি লিফট (একটি গাড়ি ওঠা-নামানোর, একটি ১০ জন ও একটি ৬ জন চলাচলের জন্য) এবং মাত্র একটি সিঁড়ি রয়েছে। ভবনটিতে জরুরি নির্গমন এবং ভেন্টিলেশনের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। অগ্নি নির্বাপনে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব রয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের সময় পানির সাহায্যে অগ্নি নির্বাপনের যেসব হুজ পাইপ ব্যবহার করা হবে সেগুলো এমন স্থানে রাখা হয়েছে যেখান থেকে তা ব্যবহার করা অত্যন্ত কঠিন। ভবনটির ভূ-গর্ভস্থ পানির ট্যাংক ভবনের বাইরে অবস্থিত। ট্যাংকের ঢাকনি খুবই ছোট, এতে কোনো তালার ব্যবস্থা নেই। ট্যাংকের পানিতে ময়লা পরিলক্ষিত হয়।
বহুতল ভবনের জন্য পরিবেশ অধিদফতরের পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক। এছাড়াও ফায়ার লাইসেন্স গ্রহণ অত্যাবশ্যক। ভবন ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাজউকের অকুপেন্সি সার্টিফিকেট গ্রহণের বিধান রয়েছে। এ ভবনের বর্ণিত ছাড়পত্র, লাইসেন্স, সার্টিফিকেট পরিদর্শনকালে পাওয়া যায়নি।
প্ররিদর্শন শেষে প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে পবার প্রতিনিধি দল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হচ্ছে- দ্রুত জরুরি নির্গমন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানিসহ জরুরি সেবা প্রদানকারী বিভিন্ন সংস্থার টেলিফোন নম্বর ভবনের বিভিন্ন তলায় বড় করে লিখে রাখার ব্যবস্থা করা, ভূ-গর্ভস্থ পানি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং ট্যাংকে বড় ঢাকনি দেয়া ও তা সংরক্ষিত রাখা। এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডের সময় অগ্নিকাণ্ডে কবলিত সবাইকেই আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য সহকারে মোকাবিলা করা, লাফ দেয়া ও ভবন বেয়ে নিচে নামা আত্মাহুতির সমান তাই তা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করা।