কয়েকদিনের প্রচণ্ড গরমের পর বৃহস্পতিবার রাতে এবং শুক্রবার সারাদেশে বয়ে যাওয়া ঝড় ও বজ্রপাতে ৬ জন নিহত এবং ৩৫ জন আহত হয়েছেন।
এর মধ্যে নরসিংদীতে ১ জন, কুমিল্লায় ১ জন, রংপুরের পীরগঞ্জে ২ জন, নোয়াখালীতে ১ জন এবং জামালপুরে ১ জন মারা গেছেন।
নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীতে শুক্রবারের বজ্রপাতে এক কন্যাশিশু নিহত এবং আরও ৩ জন আহত হয়েছে।
জানা গেছে, নরসিংদীর পলাশে বজ্রপাতে সুইটি (৭) নামে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এসময় তার ভাই আরমানসহ আরও ৩ জন আহত হয়। আহতদের স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নিয়নের বালিয়া ফৌজি চটকল মিল এলাকায় সুইটি তার ভাইসহ ৪ থেকে ৫ জন বাড়ির পাশে পুকুরে গোসল করছিল। এসময় বজ্রপাত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই সুইটির মৃত্যু হয়।
পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে।
সুইটি বালিয়া এলাকার নূরু মোহাম্মদের মেয়ে। সে স্থানীয় ফৌজি চটকল মিল স্কুলের ২য় শ্রেণির ছাত্রী।
নোয়াখালী জেলা প্র্রতিনিধি জানান, নোয়াখালী সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামে শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে বজ্রপাতে নার্গিস আক্তার (১৪) নামে এক স্কুলছাত্রী নিহত হয়েছে।
এ সময় নিহতের ভাই রাকিব হোসেন (১২) গুরুতর আহত হয়। আহত রাকিবকে নোয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নার্গিস স্থানীয় নোয়ান্নই ইউনিয়নের নোয়ান্নই উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
নার্গিসের বাবা কামাল হোসেন জানান, সকালে রাকিব ও নার্গিস বাড়ির পাশে বোরো ক্ষেতে ধান দেখতে যায়। হঠাৎ বজ্রপাতে নার্গিস আক্তার ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এ সময় রাকিব হোসেন গুরুতর আহত হয়।
অপরদিকে, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের চরমহিউদ্দিন গ্রামের কাউছার মিয়ার স্ত্রী সিমু আক্তার (৩০) বাড়ির আঙিনায় কাজ করার সময় বজ্রপাতে গুরুতর আহত হয়।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে নোয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জামালপুর জেলা প্রতিনিধি জানান, জামালপুর সদর উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নে কালবৈশাখী ঝড়ে ঘরচাপা পড়ে এক মাদ্রাসা ছাত্র নিহত হয়েছে। এ সময় গাছপালা ও ঘরচাপায় আহত হয়েছে আরও অন্তত ৩০ জন।
বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত স্থায়ী ঝড়ে হতাহতের পাশাপাশি প্রায় শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। বেশকিছু পোল্ট্রি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
নিহত মমিন (১০) শ্রীপুর ইউনিয়নের ভালুকা গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে।
সে স্থানীয় কেশবপুর দাখিল মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র।
আহতদের নাম জানা জায়নি।
ঝড়ে হতাহতের সত্যতা নিশ্চিত করে শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মইনুল হক দুদু জানান, ঝড়ে শ্রীপুর ইউনিয়নের দড়িপাড়া, কেশবপুর, ভাগড়া, বিষ্ণপুর, ভালুকা দক্ষিণ পাড়া, উত্তরপাড়া ও পশ্চিমপাড়া এলাকার শতাধিক কাঁচা ঘড়বাড়ি ধসে পড়ে।
এ সময় প্রায় ৩ শতাধিক গাছপালা উপড়ে পড়ে এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঝড়ের পর থেকে ওইসব এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে।
জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রসাশক জাহাঙ্গীর আলম ও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
শ্রীপুর ইউনিয়ন ছাড়াও সদর উপজোর রশিদপুর, ঘোড়াধাপসহ জেলার সব উপজেলার ওপর দিয়ে ঝড়ো বাতাস বয়ে যায়।
যশোরের কেশবপুর থেকে সংবাদদাতা জানান, যশোরের কেশবপুর উপজেলায় শুক্রবার সকালে বজ্রপাতে সুরেন শীল (৬০) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
সুরেনের বাড়ি আড়ুয়া গ্রামে।
এলাকাবাসী সূত্র জানায়, সকালে সুরেন শীল পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিল খুকশিয়ায় টিআরএম প্রকল্পে বেড়িবাঁধে মাটি কাটার কাজে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ ঝড় বৃষ্টি শুরু হলে তিনি একটি গাছের নিচে আশ্রয় নেন। এ সময় বজ্রপাত হলে সুরেন শীলের সমস্ত শরীর ঝলসে যায়।
পরে এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে দ্রুত কেশবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক কামরুজ্জামান জানান, বজ্রপাত ঘটার পরেই সুরেন শীলের মৃত্যু হয়েছে।
কেশবপুর থানার ওসি মীর রেজাউল হোসেন রেজা বজ্রপাতে সুরেন শীলের মৃত্যুর খবর শোনেননি বলে জানান।
রংপুর জেলা প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে রংপুর ও এর আশপাশের এলাকায় ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়। এ সময় বজ্রপাতে জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর গ্রামের এক দম্পতি মারা গেছেন।
মৃতরা হলেন-বাবু মিয়া (৪০) ও তার স্ত্রী মিনারা বেগম (৩২)।
মৃত বাবু মিয়ার ভাতিজা বিলু মিয়া জানান, রংপুর জেলায় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত থেমে থেমে ঝড় হয়।
ঝড়ের সময় পীরগঞ্জের ওই দম্পতি দাউদপুর বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় আকস্মিক বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যান।
ঝড়ের কারণে এ সময় রংপুর শহরসহ আশপাশের উপজেলাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লায় বজ্রপাতে লিটন (৩০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে জেলার বি-পাড়া উপজেলার জামতলী গ্রামে বজ্রপাত হলে লিটন মারা যান।
তিনি বি-পাড়া উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের জামতলী গ্রামের আব্দুল আহাদের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুপুরে জেলা বি-পাড়া উপজেলার জামতলী গ্রামের বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই লিটন মারা যান।