চারজন মানুষের খাবারের বিল ৫ হাজার ৩০ টাকা। যেখানে ৩০ টাকার নান রুটির দাম ১০০ টাকা আর ৩০০ টাকার চিকেন টিকার দাম ৯০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। খাবার খেয়ে বিল দেখে কারো চোখ কপালে উঠছে, কেউ আবার অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা। এটি যেন দিনে-দুপুরে ডাকাতির চেয়েও বেশি কিছু। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার হাজির বিরিয়ানির চিত্র এটি (রেস্টুরেন্ট-৩)। এতে করে মেলায় হাজির বিরিয়ানিসহ অধিকাংশ খাবারের দোকানে দর্শনার্থীরা বিপাকে পড়ছেন। কারোর সঙ্গে বিল নিয়ে তর্ক-বির্তক আবার হাতাহাতিও হচ্ছে।
সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা গেছে, বাণিজ্য মেলায় বিরিয়ানি দোকানের নাম নিয়ে প্রতারণা করছে দোকানিরা। ওইসব বিরিয়ানির দোকানের কর্মীরা যদিও ‘পুরান ঢাকার হাজির বিরিয়ানি’ বলে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছেন।
তবে পুরান ঢাকার নাজির বাজারের আলাউদ্দিন রোডের হাজির বিরিয়ানির মূল শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বণিজ্য মেলায় তাদের কোনো দোকান নেই। যারা হাজির বিরিয়ানি নামে ভাঙিয়েছে তারা প্রতারণা করছে বলেই জানান হাজির বিরিয়ানি কর্তৃপক্ষ।
মেলায় দেখা গেছে, হাজির বিরিয়ানি অ্যান্ড কাবাব, অনিক হাজির বিরিয়ানি অ্যান্ড কাবাব হাউজ, নিউ হাজির বিরিয়ানি অ্যান্ড নিউ কাবাব ঘর, হাজির বিরিয়ানি অ্যান্ড কাবাব রোস্তারাঁ, হাজির রেস্তোরাঁ, হাজির বিরিয়ানি অ্যান্ড কাবাব ঘর’ নামে একাধিক খাবারের দোকান রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত চারটি হাজির বিরিয়ানির নামে দোকান পাওয়া গেছে।
শুধু তাই নয়- বাণিজ্য মেলায় খাবারের রেস্টুরেন্ট মালিকরা খাবারের ভ্যাট নিচ্ছেন অথচ ক্রেতার চালান কপি দিচ্ছেন না। ক্রেতারা ভ্যাটের চালান কপি চাইলে উল্টো ঝগড়া করছেন দোকানিরা। কাউকে আবার হাতে লেখা বিল ধরিয়ে দিয়ে সঙ্গে ভ্যাট রাখা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন এভাবে ভ্যাট নিতে পারে না কোনো প্রতিষ্ঠান। আর তা নিলে তা সরকারি কোষাগারেও জমা হয় না। যা একটা বড় ধরনের প্রতারণা।
দেখা গেছে, প্রতিবছর মেলা আসলেই এই খাবারের দাম নিয়ে অভিযোগ ওঠে। তবে এর যেন কোনো সুরাহাও নেই। ভ্রাম্যমান আদালত অভিযানও চালায় মাঝেমধ্যেই। তবুও কোনো সুরাহা হচ্ছে না।
মেলা কতৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত দামের তালিকা থেকে জানা গেছে, নান রুটি স্পেশাল ৬০ টাকা, সাধারণ ৩০, দেশি মুরগির চিকেন টিকা ৩০০, চিকেন বিরিয়ানি হাফ প্লেট ১৫০ আর ফুল প্লেট ২৯০ টাকা, মাটন বিরিয়ানির দামও কাছাকাছি, বিফ কাচ্চির দাম একটু কম ১৪০ হাফ এবং ফুল ২৭০ টাকা। কোমল পানীয় ও মিনারেল ওয়াটারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে পাঁচ টাকা বেশি।
খাবারের এই মূল্য তালিকা মেলার বিভিন্নস্থানে বিশাল লম্বা সাইনবোর্ডে সাঁটানো থাকলেও কোনো দোকানে তা দেখা যায়নি। এমনকি প্রত্যেক দোকানের খাবারের টেবিলে মূল্য তালিকা দেয়ার কথা থাকলেও কেউ তা মানছেন না। অধিকাংশ দোকানেই ভোক্তাদের কাছ থেকে দুই থেকে তিন গুণ বা কখনো তারও বেশি দাম আদায় করছে খাবারের দোকানগুলো।
অথচ মেলার আয়োজক রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রতিটি খাবার স্টল-প্যাভিলিয়নগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে প্রত্যেক স্টল-প্যাভিলিয়নের সামনে এবং টেবিলে খাবারের মেন্যু’র সঙ্গে ইপিবি নির্ধারিত দাম প্রদর্শন করতে। কিন্তু কে মানে কার নির্দেশনা। আন্তর্জাতিক মানের মেলা এটি, অথচ সেখানে দিনে-দুপুরে দর্শকের পকেট থেকে ডাকাতি করা হলেও কারো যেন এ বিষয়ে কিছুই করার নেই। যখন কোনো অভিযান পরিচালনা হয় তখন তারা মূল্য তালিকা দেখান তবে অভিযানের কর্মকর্তারা চলে গেলে প্রত্যেক টেবিল থেকে মূল্য তালিকা উঠিয়ে ফেলেন। কোনো দোকানে জরিমানা হলে তা উঠাতে আরও মরিয়া হয়ে ওঠেন খাবারের দোকানিরা।
গত রোববার মেলায় ভিআইপি গেট সংলগ্ন প্রথম হাজির বিরিয়ানি দোকানে খাবার খেয়ে ৫ হজার ৩০ টাকা বিল দিয়েছেন তানিয়া হাসান। তিনি বলেন, তারা চারজন মেলায় ঘুরতে গিয়ে ওখানে খেয়েছেন। চারটা নানরুটি ও চারটা চিকেন টিকা খান তারা। সঙ্গে ২৫০ এমএল দুটি কোল্ডড্রিংক ও ৫০০ এমএল দুটি মিনারেল ওয়াটারও নিয়েছিলেন। খাওয়া শেষে তাদের ৫ হাজার ৩০ টাকার বিল দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বাণিজ্য মেলার কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী এই খাবারের বিল এক হাজার ৫৪০ টাকা। ক্যাশ ম্যামে চাইলে সাদা কাগজে লিখে দেয়। পরে অনেক চাপাপাপি পর সরকারি চালানপত্রে বিল করে দেয় হাজির বিরিয়ানির কর্তৃপক্ষ। মেলা কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত খাবারের মূল্য তালিকায় সব প্রকার ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ উল্লেখ থাকলেও তারা বিলে ৭০০ টাকা অতিরিক্ত ভ্যাট আদায় করেছে বলেও জানান তিনি।
সোমবার ওই বিলের কপি নিয়ে হাজির বিরিয়ানিতে গেলে বিলে স্বাক্ষরকারীর নামে কাউকে পাওয়া যায়নি। দোকান কর্তৃপক্ষ বলেন, এই নামে তাদের কোনো কর্মচারীই নেই। বিলের কাগজে দোকানের যে নম্বর দেয়া হয়েছে তা ভুয়া। খাবারের কোনো প্যাভিলিয়ন ওই নম্বরে বরাদ্দ নেই।