সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের পথ খুঁজে বের করতে বাংলাদেশের ছোটবড় সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা সফররত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শেরম্যান।
শুক্রবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন।
যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের তৃতীয় সর্বোচ্চ পদমর্যাদার এই নারী কর্মকর্তা সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এদেশের জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহযোগ্য নির্বাচনের জন্য একটি পথ সব রাজনৈতিক দল মিলেই খুঁজতে হবে।’
বাংলাদেশে মার্কিন স্পেশাল ফোর্স মোতায়েন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নতুন করে এই মুহূর্তে আর কোনো স্পেশাল ফোর্স এদেশে আসবে না।’
‘তবে যারা আছে তারা এদেশে দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেবে’, বলেন তিনি।
সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ও ভূমিকার প্রশংসাও করেন ওবামা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।
ওয়েন্ডি শেরম্যান দক্ষিণ এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার ঢাকা আসেন। তিনি ভারত ও নেপাল সফর করে এখানে আসেন।
শেরম্যান বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন।
মানিকগঞ্জে শেরম্যান:
মার্কিন সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফরে এলে বরাবরের মতোই যেভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের যে কোনো একটি ‘সফল’ প্রকল্প ঘুরে দেখেন তেমনি ওয়েন্ডি শেরম্যানকেও শুক্রবার মানিকগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়।
পূর্ব নির্ধারিত সফরে শেরম্যানকে এদিন মনিকগঞ্জের কটিগ্রামে গ্রামীণ ব্যাংকের আঞ্চলিক কার্যালয় পরিদর্শন করানো হয়। সেখানে বরাবরের মতোই গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতা নারীরা তাদের ‘সফল’ জীবনের গল্প শোনান। যা দেখে পূর্বসূরিদের মতোই মুগ্ধ হন মার্কিন এই কর্মকর্তা।
গ্রামীণ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করা উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান এ সময় সেখানে ছিলেন। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা সফরসঙ্গী ছিলেন।
শুক্রবার দুপুরে গ্রামীণ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কিছু সময় কাটানোর পর ওয়েন্ডি শেরম্যান সেখানে সাংবাদিকদের বলেন, ‘শান্তিতে নোবেল জয়ী গ্রামীণ ব্যাংকে খুব শিগগির একজন পূর্ণ দায়িত্বের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রয়োজন; বিশ্ব সম্প্রদায় তা দেখতে আগ্রহী হয়ে আছে।’
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের গ্রামে থাকা মানুষের জীবনযাত্রার পদ্ধতি পাল্টিয়ে দিতে গ্রামীণ ব্যাংক পূর্ণ সক্রিয় রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যারা তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য জন্য এই ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। এর ঋণ নিয়ে মানুষতো ভবিষ্যতের উন্নতির জন্যই কাজ করছে।’
শেরম্যান এতো কথা বললেও সাংবাদিকদের মূল আগ্রহের প্রশ্নটি ছিল গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে সার্চ কমিটিতে ইউনূসের থাকা না থাকা নিয়ে। সরকার ইউনূসের নেতৃত্বে অনুসন্ধান কমিটি চায় না বলে অর্থমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
এ প্রশ্নের জবাবে ইউনূসকেন্দ্রীক সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি শেরম্যান।
তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংকের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ মেয়াদের জন্যই পূর্ণকালীণ একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেছে নেওয়া খুব শিগগিরই প্রয়োজন।’
তবে তিনি বলেন, ‘একটি ব্যাপার খুবই স্পষ্ট, গ্রামীণ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত এমডির সহযোগিতায় নয়া এমডি বাছাইয়ে সরকার সক্রিয় রয়েছে।’
প্রসঙ্গত, নির্ধারিত বয়সের চেয়ে প্রায় ১০ বছর বেশি হয়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং বিধি অনুযায়ী গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে গত বছরের মার্চে ইউনূসকে অপসারণ করে সরকার। এরপর বিষয়টি বহুদূর গড়ায়। মার্কিন প্রশাসন ইউনূসের পক্ষে সরকারের কাছে নানাভাবে তাদের মনোভাব জানায়। যদিও সরকার তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে।