আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বিআরটিসি’র বহরে যোগ হচ্ছে আরো ২৯০টি দোতলা বাস। ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে অশোক লেল্যান্ডের নতুন এই ডাবল ডেকারগুলো। ইতিমধ্যে ২৭টি বাসের চারটি চালান দেশে এসে পৌঁছেছে। অক্টোবর নাগাদ বাকিগুলোও আসবে বলে জানিয়েছে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ।
সংস্থাটি বলছে, বাসগুলো চালু হলে রাজধানীতে যানবাহন ও গণপরিবহনের সংকট অনেকটা কমে যাবে। এর মধ্যে ১০০টি বাস স্কুলগুলোর জন্য বরাদ্দ দেওয়া হবে। কিছু বাস অন্যান্য বিভাগীয় শহরে পাঠানোর কারণে উপকৃত হবেন সেসব শহরের নাগরিকরাও।
তবে মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয়ে নতুন নতুন বাস আমদানি করা হলেও সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলো নির্ধারিত সময়ের আগেই যাত্রী পরিবহনের অযোগ্য হয়ে পড়ে বলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিসি) সূত্র জানায়, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ডলার ক্রেডিট লাইন (ডিসিএল) চুক্তির আওতায় ২০১১ সালে ২৯০টি দ্বিতল (ডাবল ডেকার) বাস কেনার সিদ্ধান্ত হয়। প্রায় ৩০৩ কোটি ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে বাসগুলোর প্রতিটিতে আসন রয়েছে ৭৫টি করে। এসব বাসের চারটি চালান (২৭টি) ইতিমধ্যে ভারত থেকে বাংলাদেশে এসে গেছে। সেগুলো গাজীপুরে বিআরটিসি’র ওয়ার্কশপে রাখা হয়েছে। এছাড়া আরো একটি চালান ভারতের পেট্রোপোলে এসেছে। ২/১ দিনের মধ্যে সেগুলো বেনাপোল স্থলবন্দরে পৌঁছাবে। অশোক লেল্যান্ড ব্র্যান্ডের বাসগুলোর প্রথম চালান আসে এ বছরের জানুয়ারি মাসে।
বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, বাকি বাসগুলো অক্টোবর নাগাদ দেশে আসবে। তবে অর্ধশত বাস আসা সম্পন্ন হলেই সেগুলো রাস্তায় নামানো হবে। চলতি মাস বা আগামী মাসের শুরুতে আনুষ্ঠানিকভাবে সেগুলোর উদ্বোধন করা হবে। বাসগুলো ঢাকা ছাড়াও বিভাগীয় শহরগুলোতে চলাচল করবে।
এসব বাসের অন্তত ১০০টি রাজধানীর স্কুলগুলোর জন্য বরাদ্দ করা হবে। স্কুলগুলোর কোন কোন রুটে বাসগুলো দেওয়া হবে তার জন্য একটি জরিপ চালানো হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের জন্য বাসগুলো যে সব রুটে চলাচল করবে তার অন্তত দুটিতে প্রতিবন্ধীদের ওঠা-নামার সুবিধার্থে র্যাম্প যুক্ত করার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন প্রতিবন্ধী সংস্থা।
যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তাদের সুবিধার জন্য র্যাম্প যুক্ত করার আশ্বাস দেন।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রাজধানীতে যানজটের অন্যতম কারণ, ব্যক্তিগত গাড়ি ও অন্যান্য ছোট পরিবহনে করে শিশু শিক্ষার্থীদের স্কুলে আনা-নেওয়া করা। বিআরটিসি’র ১০০টি বাস রাজধানীর বিদ্যালয়গুলোকে দেওয়া হবে, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো শিশু-শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের আনা-নেওয়ার কাজ করতে পারে।
যোগাযোগমন্ত্রী জানান, প্রয়োজনে তিনি নিজে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে প্রশাসন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এসব বিআরটিসি বাস ব্যবহারে উৎসাহিত করবেন।
গত বছরের জানুয়ারি মাসেও স্কুলশিশু পরিবহনের জন্য রাজধানীর মিরপুর থেকে আজিমপুর পর্যন্ত ১৪টি বিআরটিসি বাস চালু করা হয়। বাসগুলো চালু করায় শিশু শিক্ষার্থী পরিবহনে ভোগান্তি অনেক কমেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
বিআরটিসি’র জেনারেল ম্যানেজার (টেকনিক্যাল) মেজর মো. ফিরোজ খান্নান ফারাজী বাংলানিউজকে বলেন, অল্প দিনের মধ্যেই বাসগুলোর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। ১০০টি বাস স্কুলগুলোকে দেওয়ার জন্য একটি জরিপ পরিচালনা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বিআরটিসি’র তথ্যমতে, বর্তমান সরকারের আমলে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এই বাস সার্ভিসকে পুনরুজ্জীবিত ও ঢাকা শহরের দুষণ রোধের জন্য ২০১০ সালে চীন থেকে ২৭৫টি সিএনজি চালিত বাস আমদানি করা হয়। ২০১১ সালে কোরিয়া থেকে আনা হয় আরো ২৫৫টি সিঙ্গেল ডেকার (একতলা) বাস। এসি ও নন এসিযুক্ত এসব বাস বর্তমানে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে চলাচল করছে।
চলতি বছর ২৯০টির পাশাপাশি আগামী বছর জুন নাগাদ আরো ৫০টি আর্টিকুলেটেড (জোড়া লাগানো দুই বগি বিশিষ্ট) বাস আসবে। এছাড়াও ১০০টি সিঙ্গেল ডেকার এসি বাস কেনার জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এর আগে ২০০২ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে সুইডেন থেকে ৫০টি ভলভো ও ভারত থেকে ২০৫টি অশোক লেল্যান্ডের দ্বিতল বাস কেনা হয়।
তবে নাগরিকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের অভিযোগ রয়েছে, মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয়ে নতুন বাস আনা হলেও তা সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষন ও অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। গত দুই বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এ সংস্থাটি ৫৩০টি বাস আমদানি করলেও বর্তমানে সব মিলিয়ে ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ রুটে ৪৬৫টি বাস চলাচল করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সালে চীন থেকে আনা বাসগুলোর অবস্থা এখন অনেকটাই নাজুক। বাসগুলোর পাখা ও দরজা অকেজো হয়ে পড়েছে। ২০০২-০৪ সালের মধ্যে আনা বাসগুলোর অধকাংশই নষ্ট হয়ে গাজীপুর, ঢাকার কল্যাণপুর, মিরপুর ও মতিঝিলে বিআরটিসি ডিপোতে পড়ে আছে। ২০০২ সালে কেনা বাসগুলোর ন্যূনতম বয়সসীমা ১৫ বছর নির্ধারিত থাকলেও ঠিকমত রক্ষণাবেক্ষণের কারণে ৬ থেকে ৭ বছরের মধ্যেই বিকল হতে শুরু করেছে।
অবশ্য বিআরটিসি বলছে, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনে বাসের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। আবার জনবলের অভাবে রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ২০১৩-১৪ সালের মধ্যে তেজগাঁও ওয়ার্কশপ আধুনিকায়ন, মতিঝিলসহ অন্য ডিপোগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং একটি আধুনিক ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির, যা তাদের ওয়েবসাইটে তুলে ধরা হয়েছে।
বিআরটিসি’র পরিচালক (অ্যাডমিন অ্যান্ড অপারেশন) এস এম ফয়সাল আলম বলেন, বিআরটিসি বাস আমাদের জাতীয় সম্পদ। বাসগুলো রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে যাত্রীসহ সকলকেই সচেতন হতে হবে।