জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করছে আওয়ামী লীগ। সমাবেশকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ডাইভারশন করে যানবাহনকে বিকল্প পথে চলাচলের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। বন্ধ রয়েছে দুটি সড়ক। আর এর প্রভাবে যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। শুধু তাই নয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে নগরীতে গণপরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও পরিবহনের সন্ধান মিলছে না। ফলে সকালে অফিসগামী মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।
সমাবেশের কারণে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে- শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন মোড় পর্যন্ত উভয় পাশের সড়ক এবং টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর মোড় পর্যন্ত।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন টিএসসি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সড়কের মূল ফটকে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যারিকেডের পাশে অবস্থান করছেন।
সমাবেশের কাজে আসা পিকআপ ভ্যানগুলো ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। অনেকে এই সড়ক বন্ধ থাকার বিষয়টি জানতেন না। সকালে গন্তব্যস্থলে সঠিক সময়ে না পৌঁছাতে পেরে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।
স্বামী ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি। ১৫ দিন থাকতে হবে। স্ত্রী জাহানারা বেগম স্বামী ও নিজের কাপড় নিয়ে মেডিকেলে যাচ্ছিলেন। বড় ব্যাগ নিয়ে রিকশা থেকে এখানেই নেমে যেতে হলো তাকে। স্বামীর আগের ওষুধ আর প্রেসক্রিপশনও তার কাছে। রাস্তা বন্ধ থাকায় সময়মত স্বামীকে ওষুধও খাওয়াতে পারলেন না। ক্ষুব্ধ জাহানারা বেগম বলেন, রাস্তা বন্ধ রাখবে আগে থেকেই বললেই হতো। টিভিতে-তো একবারও দেখলাম না। প্রচার না করেই হুটহাট রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এটা কেমন সংস্কৃতি?
রিপা আমিন নামে আরেক শিক্ষার্থী জানান, কিছু হলেই সড়ক বন্ধ করতে হবে? যারা নিজস্ব গাড়ি দিয়ে চলাচল করে তাদের জন্য বিকল্প সড়ক দিয়ে যাওয়া সম্ভব। আমরা যারা গণপরিবহণে চলাফেরা করি আমাদের-তো পায়ে হাটা ছাড়া উপায় নেই।
জুবায়ের রাসেল নামে আরেক পথচারী বলেন, এখনতো কেবল ভোগান্তির শুরু। বিকেলে যখন সবাই বের হবে, তখন কী অবস্থা হবে সেটা চিন্তা করছি।
এদিকে সোমবার রাতেই সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছিল। তবে মঙ্গলবার সকালে অনেকেই এ বিষয়টি জানতেন না বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকাল ৯টায় রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা রামপুরা ব্রিজে দেখা গেছে, অফিসগামী মানুষের ভিড়। তারা সবাই বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু কোনো বাস আসছে না।
কিছুক্ষণ পর বন্ধু পরিবহনের এক বাস সহকারী অপেক্ষমান মানুষকে জানান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সমাবেশ উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের দলীয় নেতাকর্মীরা অধিকাংশ গণপরিবহন ভাড়া নিয়ে নিয়েছে। সে জন্যই আজ পরিবহন কম।
একই চিত্র দেখা গেছে, নগরীর ফার্মগেট, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, ইয়ারপোর্ট, গাবতলি, মোহাম্মদপুর, গুলিস্তান, সদরঘাট, মতিঝিল, পল্টন, মালিবাগ, মগবাজার, কারওয়ান বাজার, অধিকাংশ এলাকা।
মগবাজার মোড়ো বাসের জন্য অপেক্ষমান প্রাণ কোম্পানির কর্মকর্তা জাকির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদিনের মতো সকালে বাসা থেকে বের হয়ে বাসের জন্য রাস্তায় দাঁড়াই। কিন্তু দীর্ঘ ৪০ মিনিট অপেক্ষা করার পরেও কোনো বাস পাচ্ছি না।
এদিকে রাজধানীর হাতিরঝিলে সাধারণ গণপরিবহনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের বহনকারী বাসগুলো অহরহ প্রবেশ করতে দেখা গেছে।