‘মন্দিরে পূজা করতেও ঢুকতে দেবেন না। দেশটা কি মগের মুল্লুক হয়ে গেল? এই আপনাদের জন্যই দেশটা ডুব-বে।’ শনিবার ভোরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কালি মন্দিরে দেবী দর্শন ও পূজা করতে মোহাম্মদপুর থেকে এসেছিলেন অজিত রাজবংশী। বাংলা একাডেমির বিপরীত দিকে উদ্যানের প্রবেশপথে তালাবদ্ধ গেটে দাঁড়িয়ে তিনি উচ্চকণ্ঠে এসব কথা বলছিলেন।
তার কথা শুনে ধমকে ওঠেন ভেতরে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের একজন। তিনি প্রথমেই জানান, মন্দিরের পুরোহিত আসলে তবেই ভেতরে প্রবেশ করতে দেবেন, অন্যথায় নয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আজ উদ্যানে প্রবেশ নিষেধ। এ কথা শোনার পরও অজিত রাজবংশীকে পাল্টা বাদানুবাদে লিপ্ত হতে দেখা যায়।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে- কাকডাকা ভোর থেকে উদ্যানে প্রবেশের প্রতিটি গেটে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা অবস্থান নিয়ে বসে আছেন। কাউকেই ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। গোটা উদ্যান ফাঁকা।
প্রাতঃভ্রমণকারীরা উদ্যানে প্রবেশের চেষ্টা করছেন
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। এখন পর্যন্ত অনুমতি পায়নি দলটি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান রাষ্ট্রীয় গুরত্বপূর্ণ স্থান। বিএনপির নেতাকর্মীরা যাতে কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড না চালাতে পারে সেজন্য উদ্যানে আগামী দুই-তিনদিন কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না বলে মন্তব্য করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
এদিকে কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ উদ্যানে প্রবেশ বন্ধ করে দেয়ায় প্রতিদিন প্রাতঃভ্রমণে আসা বিভিন্ন বয়সের অসংখ্য নারী ও পুরুষও ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। অপেক্ষাকৃত বয়োবৃদ্ধরা কিছুক্ষণ হাটাহাটির জন্য ভেতরে প্রবেশ করতে পুলিশকে অনুরোধ জানিয়েও অনুমতি পেতে ব্যর্থ হন।
উদ্যানের ভেতর পুলিশের অবস্থান
আশরাফ আলী নামের একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মাত্র কয়েকদিন আগে জাতীয় পার্টি উদ্যানের ভেতর বিশাল সমাবেশ করলো। তখন তো তাদের বাধা দেয়া হয়নি। অথচ বিএনপির মতো বড় দলের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ তুলে সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।’ একই দেশের দুটি রাজনৈতিক দলের জন্য দু ধরনের আচরণ কাম্য নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য, দশম সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন ৫ জানুয়ারিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে বিএনপি। এবার এ দিনটিতে রাজধানীতে দলটি কোনো কর্মসূচি না রাখলেও জেলায় জেলায় কালো পতাকা মিছিল করে। শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের ডাক দেয় দলটি।