দেশে বর্তমানে প্রতি ৩ হাজার ১২ জনের বিপরীতে একজন ডাক্তার, প্রতি ২ হাজার ৬ শ’ ৬৫ জনের জন্য একটি মাত্র শয্যা এবং ৬ হাজার ৩শ’ ৪২ জনের জন্য একজন নার্স রয়েছেন। এছাড়া চিকিৎসকের সঙ্গে নার্সের অনুপাতও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
আগামী শনিবার বিশ্বস্বাস্থ্য দিবসকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক এ তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, এবারের স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, ‘প্রবীণদের যত্ন নিন : স্বাস্থ্য রক্ষায় এগিয়ে আসুন’। তিনি এই প্রতিপাদ্য বিষয়টিকে সামনে রেখে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে প্রবীণদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য আহবান জানান।
মন্ত্রী বলেন, আগামী ২/৩ বছরে দেশের মেডিক্যাল কলেজগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ডাক্তার পাস করে বের হবেন। তখন ডাক্তারের এতো স্বল্পতা থাকবে না।
‘উন্নয়নশীল দেশে সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে জনগণের কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না’ উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে স্বাস্থ্য খাতে মোট ব্যয়ের পরিমাণ হচ্ছে জিডিপির ৩ দশমিক ১ শতাংশ। উন্নত দেশের তুলনায় এটা অনেক কম।
তিনি জানান, স্বাস্থ্য সেবার জন্যে যেখানে মাথাপিছু ২৪ ডলার প্রয়োজন, সেখানে আমরা মাত্র ৮ ডলার ব্যয় করতে পারছি। এটাকে ২৪ ডলারে উন্নীত করতে অনেক সময় লাগবে।
মন্ত্রী বলেন, তবে সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোঁড়গোড়ায় পৌঁছানোর জন্য সরকার ইতিমধ্যেই ১১ হাজার ৫৯৯টি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু করেছে এবং সাড়ে ১৩ হাজার কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গ্রামের সাধারণ মানুষ এসব কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য চাহিদা মেটানোর সুযোগ পাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, এছাড়া সরকার দেশে অনলাইন চিকিৎসা ব্যবস্থা ও টেলিমেডিসিন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ প্রক্রিয়ায় যে কোনো সাধারণ রোগী তাৎক্ষণিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা পেতে একটি চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র বা প্রেসক্রিপশন পাচ্ছেন। মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবার গুণগত মান উন্নয়নে পর্যাপ্ত ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জমাদি সরবরাহ ছাড়াও ৬ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর শূন্যপদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যখাতে বিদ্যমান অবকাঠামোর পরিসংখ্যান তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে সরকারী পর্যায়ে ৫৮৩টি ও বেসরকারী পর্যায়ে ২ হাজার ৫০১টিসহ মোট ৩ হাজার ৮৪টি হাসপাতাল রয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় দেশে বিভিন্ন পর্যায়ের হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৩৯ হাজার ৬৩৯টি, যা সাত বছর আগে ছিলো ৩২ হাজার ৮৬০টি। বেসরকারি পর্যায়ে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৪২ হাজার ২৩৭টি, যা সাত বছর আগে ছিলো ১২ হাজার ৩২৮টি।
মন্ত্রী জানান, এছাড়া বর্তমানে দেশে সরকারি-বেসরকারি ৭৫টি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ২২টি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ৫৩টি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নতুন করে আর কোনো বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন দেওয়া হবে না। কারণ পর্যায়ক্রমে নতুন ডাক্তারদের চাকরি প্রদান কঠিন হয়ে পড়বে। ফলে তারা দেশের বাইরে চলে যেতে উৎসাহী হবেন। কিন্তু একজন ডাক্তার তৈরির পেছনে সরকারের ব্যয় এতো বেশি যে, আমরা চাই না তারা বাইরে চলে যাক।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ওষুধের মূল্য যাতে না বাড়ে সেদিকে সরকারের দৃষ্টি রয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার মান যাতে ঠিক থাকে এর ওপর সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে।