হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আবারও এক স্বর্ণ মানবকে আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত অধিদফতর।
রাতভর নাটকীয়তার পর ভোর রাতে স্বর্ণমানব শরীফ আহমেদের শরীর এক্সরে করার পর পেটে স্বর্ণের সন্ধান মেলে। পরে তলপেট কাটার কথা জানালে বিশেষ কায়দায় পায়ুপথ দিয়ে ১২টি স্বর্ণের বার বের করেন ওই স্বর্ণমানব। স্বর্ণবারগুলোর ওজন ১ কেজি ২০০ গ্রাম। প্রতিটির ওজন ১০০ গ্রাম। আটক স্বর্ণের মূল্য প্রায় ৬০ লাখ টাকা।
স্বর্ণমানব শরীফ আহমেদের পাসপোর্ট নং BM 0806731, বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচং ময়নামতি বাজার।
শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মইনুল খান জানান, মালিন্দ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট OD162 এ রাত সোয়া ১২টায় শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
শুল্ক গোয়েন্দা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই যাত্রীকে নজরদারিতে রাখে। কাস্টমস হলের গ্রিন চ্যানেল অতিক্রম করে চলে যাওয়ার সময় চ্যালেঞ্জ করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় শরীফ আহমেদকে।
ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদেও তার কাছে স্বর্ণবার থাকার কথা অস্বীকার করতে থাকেন। শুল্ক গোয়েন্দার দল রাত ৩ টায় উত্তরা উইমেন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যান তাকে। ডাক্তার যাত্রীর পেটে এক্সরে সম্পন্ন করান। এতে রেক্টামে ৩টি অস্বাভাবিক পোটলার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এক্সরে রিপোর্ট দেখালেও যাত্রী অস্বীকার করছিলেন।
তিনি তার আত্মীয় বড় কর্মকর্তা বলে হুমকি দিতে থাকেন। বের হয়ে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ‘দেখে নেবো’ বলে সতর্ক করেন।
এরপর শুল্ক গোয়েন্দাদের উদ্যোগে কর্তব্যরত ডাক্তার তলপেট কেটে স্বর্ণ বের করার জন্য অপারেশন থিয়েটারে নিলে তিনি নমনীয় হন। অপারেশন ছাড়া স্বর্ণ বের করে দেবেন বলে ওয়াদা করেন তিনি।
এরপর চলে স্বর্ণ বের করার পালা। যাত্রীকে শাহজালালের কাস্টমস হলে নিয়ে এসে পানি খেতে দেয়া হয়। পরে টয়লেটে নিয়ে তলপেটে চাপ প্রয়োগ করা হয় দীর্ঘক্ষণ। কোনো কিছুতে কাজ না হলে তাকেই বলা হয় স্বর্ণ বের করে দিতে। দেয়া হয় লুঙ্গি। লুঙ্গি পরে শুল্ক গোয়েন্দাদের উপস্থিতিতে টয়লেটের অভ্যন্তরে বিশেষ কায়দায় পায়ুপথ দিয়ে একে একে ৩টি কনডম বের করে আনেন ৩৩ বছর বয়সী যাত্রী শরীফ আহমেদ। বের করা ৩টি কনডমের ভেতর থেকে ৪টি করে মোট ১২টি স্বর্ণবার পাওয়া যায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, যাত্রী চারটি গোল্ডবার স্কচ টেপ দিয়ে পেঁচিয়ে একটি কনডমে রেখে তা আবার স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে রেক্টামে প্রবেশ করান। এ রকম ৩টি কনডম প্রবেশ করান তিনি। ফ্লাইট অবতরণ করার ৩০ মিনিট আগে আকাশপথে বাথরুমে গিয়ে যাত্রী কনডমগুলো পায়ুপথে পুশ করেন। এজন্য মালয়েশিয়াতে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন তিনি।
শুল্ক গোয়েন্দাদের নজরদারির হাত থেকে বাঁচার জন্য এই অভিনব পদ্ধতি গ্রহণ করেন বলে তিনি জানান। জীবনের ঝুঁকি থাকলেও টাকার জন্য এই পন্থা অবলম্বন করেন।
তিনি জানান- একজন স্থানীয়বাজারের মুদি ব্যবসায়ী তিনি। গত ৩ জানুয়ারি ব্যবসার কাজে মালয়েশিয়া যান। ২০১৬ সালে তিনি ১০ বার বিদেশ ভ্রমণ করেন।
এই ব্যাপারে আটক স্বর্ণমানব শরীফ আহমেদকে গ্রেফতার এবং অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আটককৃত স্বর্ণ দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করা হবে।
এর আগেও শুল্ক গোয়েন্দা শাহজালালে স্বর্ণমানবের সন্ধান পায়। সর্বশেষ গত ১৭ অক্টোবর এক যাত্রীর রেক্টাম থেকে ৮টি স্বর্ণবার উদ্ধার করা হয়।