মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভাল মাঠে পুরো দস্তুর প্র্যাকটিস সেশন শেষে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা ছিল। ড্রেসিং রুম লাগোয়া সে ডাইনিংয়ে কম বেশি সব ক্রিকেটারই দুপুরের খাবার খেলেন। কিন্তু একজন বাদ থাকলেন। তিনি মাশরাফি বিন মর্তুজা। টাইগার অধিনায়ক, ম্যানেজার সাব্বির খানকে জানিয়ে দিলেন আমি লাঞ্চ করবো না।
পুরো দল প্রায় এক সাথে মধ্যাহ্ন ভোজে, অথচ অধিনায়ক নেই। কোন সমস্যা ? নিশ্চয়ই ভাবছেন অধিনায়কের আবার কিছু হলো নাকি। না না। অমন কিছু নেই। মাশরাফি সম্পূর্ণ সুস্থই আছেন। প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হারার পর যে মনের কোনে হাল্কা মেঘ জমেছিল তাও কেটে গেছে। আজ বৃহষ্পতিবার প্র্যাকটিসে একদম চাঙ্গা। চিরচেনা মাশরাফি।
কিন্তু সব যদি ঠিক থাকবে, তাহলে লাঞ্চ না করার কারন কি ? নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে, তাহলে শুরুণ, মাশরাফির স্ত্রী আর সন্তানরা আজ মাউন্ট মুঙ্গানাইয়ে আসছেন। প্র্যাকটিস শেষে টিম হোটেলে ফিরে গিয়ে তাদের সবাইকে নিয়ে পরম আনন্দে দুপুরের খাবার খাবেন, তাই দলের সাথে আজকের দুপুরের খাবার না খাওয়া অধিনায়কের।
মাশরাফি যখন বে ওভালে প্র্যাকটিসে, তখন তার স্ত্রী দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ওভালে এসে নামলেন। তারপর ওভার থেকে এক ঘন্টার ফ্লাইটে মাউন্ট মুঙ্গানাইয়ে তেয়ারাঙ্গার টিম হোটেলে।
সেই গত বছর ডিসেম্বরের ১১ তারিখে ঢাকা ছেড়েছেন। তারপর প্রায় চার সপ্তাহ হতে চললো। স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে এক সঙ্গে বসে আর খাবার খাওয়া হয়নি। অবশেষে আজ সে সুযোগ এসেছে।
সবার জানা মনের দিক থেকে উদার মাশরাফি স্নেহ পরায়ন পিতাও। শেরে বাংলায় কন্যা ও পুত্র কোলে অনেকবার দেখা গেছে। সেই সন্তানদের ছাড়া প্রায় ২৬/২৭ দিন। তাই নড়াইল এক্সপ্রেস উন্মুখ । কখন সন্তানদের মুখ দেখবেন, কখন তাদের কোলে নিয়ে আদর করবেন ? স্নেহ মমতায় ভরিয়ে দেবেন। পিতা বলে কথা !
তাইতো বললেন, ‘আমি হোটেলে গিয়ে ছেলে মেয়েকে নিয়ে লাঞ্চ করবো। ’ চার সপ্তাহ পর স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে ( এক মেয়ে, এক ছেলে )
দেখা, তাদের সঙ্গে এক বেলা খাওয়া, এ আবার এমন কি ? খালি চোখে এটা নিতান্তই সাধারণ এক ঘটনা।
কিন্তু এর ভিতরের অন্তর্নিহিত কারণ অন্য। মাশরাফি একজন যোগ্য দক্ষ অধিনায়কের পাশাপাশি আদর্শ নেতাও। আবার ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে এক অনিন্দ সুন্দর মনের মানুষও। তার চেয়ে বড় কথা, পিতা হিসেবেও মাশরাফি অন্যন্য। আজ দুপুরে এক বেলা খাবার তিনি স্ত্রী সন্তানের সঙ্গে না করতেই পারতেন। নাহ, এতদিন পর ওদের সাথে দেখা , দুপুরে সবাই মিলে এক সঙ্গে স্থানীয় কোন ভালো রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়ার মাঝে একটা অন্যরকম আনন্দ ও তৃপ্তি আছে। মাশরাফি যে অমন অকৃত্রিম আনন্দই ভালবাসেন।
এ ভালবাসা জানান দিল, টাইগার ক্যাপ্টেনের কাছে ক্রিকেট মাঠ, বল, ব্যাট ও সহযোগী ক্রিকেটাররা যেমন প্রিয় , একই ভাবে তার ঘর ও সন্তানরাও অনেক প্রিয়।