যশোর-২ আসনের সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ (৭৪) আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদের মামাতো ভাই নাসিমুল হাবিব বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বেশ কিছুদিন ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন।
মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুস সাত্তার।
মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ ১৯৪২ সালের ২১ মার্চ যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা অ্যাড. সেকেন্দার মোহাম্মদ মোসলেম ও মা আমেনা খাতুন। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় ১৯৪৮ সালে গ্রামের পাঠশালাতে। ঝিকরগাছা হাই স্কুলে ১৯৫৬ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৫৮ সালে যশোর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে আই.এ পাশ করেন। ১৯৬১ সালে অনার্স এবং ১৯৬২ সালে মাস্টার্স পাশ করেন।
১৯৬৮ সালে কুষ্টিয়ার মেয়ে মমতাজ হাবিবের সঙ্গে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হন তিনি। পারিবারিক জীবনে তিনি দুই মেয়ের জনক। বড় মেয়ে হৃদি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনের বাসিন্দা এবং ছোট মেয়ে দিশা সোনাতা ঢাকায় আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার একজন সিনিয়র প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর।
মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ পেশাগত জীবন শুরু করেন ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে। ১৯৬৮ সালে তিনি জাপানে পাকিস্তান দূতাবাসে নিয়োগ পান। ১৯৭০ সালে পদোন্নতি পেয়ে দ্বিতীয় সচিব হন।
১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যখন ইন্দোনেশিয়া সরকার বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় তখন তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর নির্দেশে তিনি সেখানে বাংলাদেশ দূতাবাস স্থাপন করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান।
১৯৭৪ সালে দক্ষিণ এশিয়া এবং উপমহাদেশ দফতরের পরিচালক পদে নিয়োগ পান। ১৯৭৬ সালে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনে তাকে বদলি করা হয়। ১৯৭৯ সালে নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশের অল্টারনেট রিপ্রেজেন্টেটিভ (বিকল্প প্রতিনিধি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮২ সালে তিনি মিশরে বাংলাদেশ দুতাবাস, ১৯৯৩ সালে ভিয়েতনামে, ১৯৯৬-৯৯ সাল পর্যন্ত রাশিয়াতে এবং ১৯৯৯-২০০১ সাল পর্যন্ত দিল্লিতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসরে যান।
মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ ২০০৮ সালে ৯ম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
জাতীয় সংসদের যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য, ভারত বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের মুখ্য সদস্য এবং বাংলাদেশ-ইরান সংসদীয় মৈত্রী কমিটির সভাপতি।
২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান।