শেয়ালের মুখ থেকে কুকুরের পাহারায় বেঁচে যাওয়া ময়মনসিংহের পিতৃপরিচয়হীন সেই নবজাতকের আশ্রয় মিলেছে রাজধানী ঢাকার এক দম্পতির কোলে।
জন্মের পর থেকে কোলে না নিলেও মঙ্গলবার ছেলেকে রেখে যাওয়ার সময় ওই মা ৩-৪ বার বুকে নিয়ে আদর করেন। এ সময় শিশুটিকে কয়েকটি চুমু দেন তিনি। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় বাড়ি হলেও তরুণী মা তার পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি।
মঙ্গলবার উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা অনুভা বিশ্বাস ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রমিজ উদ্দিন স্বপন নবজাতককে ইউএনও’র কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মর্জিনা আক্তারের উপস্থিতিতে চুক্তির মাধ্যমে গত ১৬ ডিসেম্বর জন্ম নেয়া বিজয়কে উদ্ধারকারী সোনাফর আলীর ছেলে মো. দুখু মিয়ার পরিবার থেকে ঢাকার এক ধনাঢ্য পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। উদ্ধারের পরে বিজয়ের ঠাঁই হয় দুখু-হোসনে আরা দম্পতির কোলে।
এদিকে নতুন পরিবারের কাছে বিজয়কে হস্তান্তরকালে কান্নায় ভেঙে পড়েন দুখু মিয়ার স্ত্রী হোসনে আরা। তিনি গত চার দিন ধরে নিজের আড়াই বছর বয়সী ছেলে শুভর সঙ্গে বিজয়কে বুকের দুধ দিচ্ছিলেন।
দুখু মিয়া ও হোসনে আরা দম্পতি জানান, অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তারা বিজয়কে ঢাকার এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে হস্তান্তর করেছেন। মঙ্গলবার নতুন পরিবারে বিজয়কে হস্তান্তরের সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন হোসনে আরা।
বিজয়কে নেয়া ওই দম্পতি নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি। তবে বিজয়কে নিজের সন্তানের মতো বড় করবেন বলে চুক্তিপত্রে অঙ্গীকার করেছেন তারা।
একই সঙ্গে পৈত্রিক ওয়ারিশ হিসেবে স্থাবর-অস্থাবর সহায়-সম্পদের অংশও তাকে দেয়ার কথা বলেছেন এ দম্পতি।
জানতে চাইলে ইউএনও মর্জিনা আক্তার বলেন, পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা ও বিজয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে ঢাকার এ দম্পতির হাতে তাকে তুলে দেয়া হয়েছে।
উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা অনুভা বিশ্বাস জানান, শিশুটিকে উদ্ধারকারী দুখু মিয়া ও হোসনে আরা দম্পতি অত্যন্ত মহৎ। তাদের ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্মতি এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতে বিজয়কে নুতন পরিবারে দেয়া হয়েছে।
গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের রাতে উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের নিজমাওহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় নবজাতক জন্ম দেন এক তরুণী মা।
পরে গভীর রাতে শিশুটিকে একটি শেয়াল নিয়ে যেতে লাগলে রক্ষা করে কুকুর। পরদিন শনিবার সকালে স্থানীয় উকিলের মা নবজাতক ও প্রসূতিকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।