‘সমুদ্র জয়ে খুলেছে সম্ভাবনার দ্বার’

‘সমুদ্র জয়ে খুলেছে সম্ভাবনার দ্বার’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মামলায় বাংলাদেশ জয়ী হওয়ায় বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।

বুধবার ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এ বিজয়ের ফলে দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হলো।”

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সরকার প্রধানের জন্য আয়োজিত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের শুরুতেই মিলনায়তনে উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান।

এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদ প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার মানচিত্র সংবলিত একটি ক্রেস্ট তুলে দেন সংগঠনের জ্যৈষ্ঠ সহ-সভাপতি জসিমউদ্দিন।

এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনিকেও ফুলের তোড়া দিয়ে অভিনন্দন জানান।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের টেরিটোরিয়াল ওয়াটার্স অ্যান্ড মেরিটাইম জোন আইন প্রণয়ন এবং মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেন।

মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমা নিয়ে বিরোধ নিস্পত্তিতে ২০০৯ সালের অক্টোবরে জার্মানির হামবুর্গে সমুদ্র আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে (আইটিএলওএস) মামলা হওয়ার পর ২০১১ সালের ৮ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুনানি চলে।

গত ১৪ মার্চ ওই মামলার রায়ের পর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়- বাংলাদেশ যা চেয়েছিল, তাই পেয়েছে। একই বিষয় নিয়ে ভারতের সঙ্গে মামলাতেও বাংলাদেশের জয় হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয় সরকারের তরফ থেকে।

এই মামলার ফলে প্রতিবেশী দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি হয়নি মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “প্রতিবেশীদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন সমস্যা আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করেছি। অন্যদিকে আমি কয়েকদিন আগেই মিয়ানমার সফরে গিয়েছি। মিয়ানমার প্রেসিডেন্টও বাংলাদেশ সফরে আসবেন।”

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সমুদ্র থেকে যে সম্পদ আহরণ করতে পারবো- তা থেকে লাভবান আপনারাই হবেন।”

সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠায় সরকারের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সাগর অনেক সম্ভাবনার জায়গা। সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউট করে ওসানোগ্রাফির ওপর শিক্ষা দেওয়া হবে।”

তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে আরো শক্তিশালী করার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

সমুদ্র সীমা নিশ্চিত না করেই বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের গ্যাস ব্লক নির্ধারণের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “কেন অর্বাচীনের মতো এই কাজ করা হলো? টেন্ডারই বা করা হলো কেন? এখন সুযোগ এসেছে- এখন ব্লক নির্দিষ্ট করে টেন্ডার দেব।”

সমুদ্রসীমা দাবি করার আগে নৌ-বাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কক্সবাজারে সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছিল। ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র কেনা হয়েছে। এমন কি কক্সবাজার বিমানবন্দরে মিগ যুদ্ধবিমানের উড্ডয়ন ও অবতরণ নিশ্চিত করা হয়েছে।”

সমুদ্র বিজয় নিয়ে বিরোধীদলের সমালোচনার জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মণি বলেন, “দেশসেবা ও জনসেবার রাজনীতি করতে হবে। এর বাইরে সব কিছুই অপরাজনীতি।”

“এ অনুষ্ঠানে আমি কারো সমালোচনা করতে চাই না। কিন্তু, কিছু কথা না বললেই নয়। আমরা জাতিসংঘে মহীসোপানের দাবি পেশ করেছি। আর এসবই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টির কারণে। আপনারা (বিরোধীদল) যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন আলোচনাটা চালিয়ে যেতেন, আন্তর্জাতিক কনভেনশনে সই করতেন বা মহীসোপানের দাবি পেশের সামান্য পদক্ষেপ নিতেন?”

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে সরকারের প্রশাংসা করে এ কে আজাদ বলেন, “আগামী অর্থ বছরে বাজেটের আকার এক লাখ ৭৯ হাজার কোটি টাকা হবে। এর মধ্যে, এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ধার্য করা হয়েছে। এটা শুধু শেখ হাসিনার সরকারের পক্ষেই সম্ভব।”

একইসঙ্গে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং আরো বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সরকার প্রধানের প্রতি আহ্বান জানান ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠনের সভাপতি।

সমুদ্র থেকে সম্পদ আহরণের জন্য কালক্ষেপণ না করার পরামর্শ দিয়ে শিক্ষাবিদ জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, “বাপেক্সকে এখনি শক্তিশালী করা উচিত। সমুদ্র থেকে সম্পদ আহরণের জন্য এখনি কাজ শুরু করতে হবে।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠনটির সাবেক সভাপতি সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “নতজানু পররাষ্ট্রনীতি পরিহার করে আদালতের মাধ্যমে আমরা আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সমুদ্র জয় উদযাপন করা উচিৎ।”

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমান শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, “এখন এনার্জি সেক্টর নিয়ে অনেক সমালোচনা করা হচ্ছে। রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের সমালোচনা করা অনেক সহজ। কিন্তু, বাস্তবতা ভিন্ন। একজন উৎপাদক হিসাবে আমি জানি- এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর গ্যাসের চাপ আর বিদ্যুৎ পরিস্থিতি যা ছিল, তার চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে।”

অন্যদের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেটের সম্পাদক মাহাবুবুল আলম অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশ রাজনীতি