‘আচ্ছা ভাই টিম বাংলাদেশের মানসিক অবস্থা এখন কেমন? মাশরাফি কি পুরোপুরি স্বাভাবিক? অন্য সব সময় যেমন হৈ চৈ রসিকতা, হাস্য-কৌতুক করে কাটান, এখনো কি তাই করছেন ? সাকিব, তামিম, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির, তাসকিন-মোস্তাফিজ সহ অন্যদের খবর কি? মোদ্দা কথা কেমন আছে টিম বাংলাদেশ ? সব ঠিক ঠাক আছে তো? একদিনের সিরিজে পর্যুদস্ত হবার পর মনের দিক ভেঙে পড়েনি তো ?
যদি মনেবাল ভেঙে গিয়ে থাকে, তাহলে তো চিন্তার কথা। এমনিতেই টি-টোয়েন্টির ট্র্যাক রেকর্ড তত ভালো না। তার উপর ওয়ানডে সিরিজে সব ম্যাচ হার। টি-টোয়েন্টি সিরিজে কি যে হবে? গত ৪৮ ঘন্টায় ফেসবুকে বাংলাদেশ সমর্থকদের উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেন হবে? গোটা দেশ-জাতি টাইগারদের মনের অবস্থা জানতে উন্মুখ। সবার না হলেও বড় অংশর মনে চাপা সংশয়-শঙ্কা, মাশরাফির দল মনের দিক থেকে স্বাভাবিক আছে? হতাশায় হতোদ্যম হয়ে পড়েনি তো ?
টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর ঠিক ২৪ ঘন্টা আগে এ কৌতুহলি প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন দেশ তথা বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সাহসী সাকিব পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, `চিন্তার কোন কারণ নেই। আমরা ঠিক আছি। আমাদের মানসিক অবস্থা ভাল আছে।`
আজ সকালে নেপিয়ারের নেলসন পার্কে দাঁড়িয়ে দেশ থেকে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজ কাভার করতে আসা সাংবাকিদের সঙ্গে আলাপের শুরুতেই সাকিবের স্বপ্রতিভ ও ইতিবাচক মন্তব্য, ‘আমার কাছে মনে হয় আমরা মনের দিক থেকে বেশ ভাল আছি। মানসিকতায় কোন ঘুন ধরেনি। সবাই যে ডাউন, তা নয়। বরং চাঙ্গা ও উৎফুল্লই আছি।’
সমালোচকরা হয়তো এটুকু শুনে ভ্র কুচকে তীর্য্যক কথা বলবেন। ওয়ানডেতে তুলোধুনো হবার পরও মানসিক ভাবে চাঙ্গা? তাদের জন্য বলা, হ্যা টিম বাংলাদেশ সত্যিই মানসিক ভাবে সতেজ। ফুরফুরে। গত কদিন খুব কাছ থেকে দেখে তাই মনে হয়েছে। সাকিব স্বদেশী সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বললেন একদম স্বাভাবিকভাবে। চোখে-মুখে-কথায় ও শারীরিক অভিব্যক্তিতে কোথাও এতটুকু উৎকন্ঠা কিংবা সংশয়-শঙ্কার চিহ্ন ছিল না। অধিনায়ক মাশরাফিও মাঠ ছেড়ে বাসে ওঠার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে স্বভাবসুলভ রসিকতা করলেন। তামিম ইকবালও স্বপ্রতিভ। সাংবাদিকদের সঙ্গে হাসি মুখে কথা বললেন। খুনসুটিও করলেন।
সিটি সেন্টারে দুপুরের খাবার খেতে দেখা মিললো বেশ কজন ক্রিকেটারের। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে উইন্ডো শপিং সাড়লেন। সাব্বিরসহ কয়েকজন দুপুরের খাবার খেলেন এক ভারতীয় রেস্তোরায়। চোখে দেখা এসব দৃশ্যই বলে দেয় মাশরাফি বাহিনী অন্তত মনের দিক থেকে ঠিক আছে। তাদের ‘মনের বাঘ খেতে পারেনি।’
ওয়ানডে সিরিজে তিন ম্যাচ হারলেও এমন ইতিবাচক মানসিকতার কারণও আছে। সে কথাও বলে দিয়েছেন সাকিব। আজ বৃষ্টিতে প্র্যাকটিস একরকম ধুয়ে মুছে গেছে। আগের দিন ( রোববার ) নেলসন থেকে নেপিয়ারে এসে হোটেলে চেক ইন করতেই দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল নেমেছে। তাই প্র্যাকটিস হয়নি। অনুশীলনের সিডিউলও ছিল না। মঙ্গলবার থেকে নেপিয়ারের ম্যাক্লেন পার্কে যে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু হচ্ছে তার আগে আজই ছিল নিজেদের ঝালিয়ে নেবার শেষ দিন।
কিন্তু বৃষ্টির বাগড়ায় তাও হলো না। অন্য সময় হলে হয়তো মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মাহমুদউল্লাহরা খানিক অনুযোগের সুরে বলতো ইস শেষ প্রস্তুতিটাও ভালো মত নেয়া হলো না। কিন্তু আজ বৃষ্টিতে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিটা চরমভাবে বিঘ্নিত হলেও টাইগাররা স্বাভাবিক। কথাবার্তা হাবভাব ও শরীরি অভিব্যক্তি এমন কি আর করা ? বৃষ্টির ওপরতো আর কারো হাত নেই। সবার মনোভাব এমন, আসলে আমরাতো প্র্যাকটিস আর খেলার ভিতরেই আছি। তাই একদিন দুইদিন অনুশীলন না হলেও কোন সমস্যা হবার কথা নয়।
ওয়ানডে সিরিজে তুলোধুনো হবার পরও দলের এমন ইতিবাচক মানসিকতার কারণ কি ? সাকিব তাও জানিয়ে দিলেন। তার মুখে আশাবাদী সংলাপ, আমরা জানি ও বিশ্বাস করি আমাদের জেতার সামর্থ্য আছে। কাজেই ওয়ানডে সিরিজে খারাপ করায় হতোদ্যম হবার কোন কারণ খুঁজে পাই না। আর আমার বিশ্বাস, ঐ না পারাকে আমরা পারার অনুপ্রেরণা হিসেবে নিতে পারি।’
সাকিব বিশ্বাস করেন ওয়ানডে সিরিজের দৃশ্যপট ভিন্ন হতে পারতো। তাইতো মুখে একথা, উইকেট যেমন ছিল, তাতে খুব ভালো সুযোগ ছিল আমাদের। কিন্তু আমরা সুযোগ তৈরি করেও তা হাতছাড়া করেছি। ঐ নেগেটিভ থেকে আমরা পজিটিভ নিতে পারি। ’
সেটা কিভাবে ? সাকিব বোঝাতে চাইলেন, আমরা ভাবতে পারি যে, আমাদের ভাল করার ও প্রভাব বিস্তারের সামর্থ্য আছে। তিন ম্যাচের সিরিজে কখনো কখনো আমরা সুযোগ তৈরি করে দেখিয়েছিও। শেষ পর্যন্ত তা কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। তবে একটা বিশ্বাস জন্মেছে আমাদের সামর্থ্য আছে ভালো খেলার। নিউজিল্যান্ডের ওপর প্রভাব বিস্তারের। জয়ের সুযোগ তৈরির। আগামীতে সে সুযোগ তৈরি হলে তা কাজে লাগিয়ে পরের ম্যাচগুলোয় মাঠে নামতে পারি, তাহলে তা সহায়ক উপাদান হিসেবে কাজ করবে।’ আর কে জানে এই সাহস, উদ্যম ও প্রত্যয় নিয়ে খেলতে পারলে টি-টোয়েন্টিতে সাফল্যের ফসল ঘরে উঠতেও পারে।