অবশেষে বিতর্কিত কর্মকর্তা ফজলুর রহমানকে বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগ দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। বুধবার থেকে তিনি দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। এবি ব্যাংকের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তার দায়িত্ব পালন শুরুর কথা নিশ্চিত করা হয়। এর আগে তিনি ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধান অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হতে হলে তাকে কমপক্ষে ১৫ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে এ খাতে ফজলুর রহমানের সাড়ে ১১ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে তার জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ইব্রাহীম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে শেয়ারবাজার ধ্বসের জন্য দায়ী শীর্ষস্থানীয়দের যে তালিকা দেওয়া হয়েছিলো, সেখানে ফজলুর রহমানের নাম রয়েছে।
এসব কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাকে এমডি নিয়োগের বিষয়ে কিছুটা নেতিবাচক ছিলো। এছাড়া পরিচালনা পর্ষদের একটি অংশও তাকে এমডি করার বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যাংকটির পক্ষ থেকে প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে মৌখিকভাবে কথা বলা হয়। সেখান থেকে ইতিবাচক সংকেত নিয়ে গত ২৯ মার্চ আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠানো হয়। গত মঙ্গলবার বিকেলে তা চূড়ান্ত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ১৯ জানুয়ারি থেকে তিনি এই ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত এমডি ফজলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলবো না। কোনো কিছু জানার থাকলে ব্যাংকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলুন। আমার কাছে যা জানতে চান, আমার হয়ে চেয়ারম্যানই তার উত্তর দেবেন।’
ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হক এ ব্যাপারে বাংলানিউজকে জানান, নতুন এমডির ব্যাংকিং পেশা ১৫ বছর হয়নি, এমন তথ্য সঠিক নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক আইন ও বিধান মেনেই এ নিয়োগ চূড়ান্ত করেছে। এখানে আইনের কোনো ব্যতিক্রম হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে যে আবেদন এসেছে, সেখানে ফজলুর রহমানের অভিজ্ঞতা ১৫ বছর দেখানো হলেও প্রকৃতপক্ষে এ খাতে তার সাড়ে ১১ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এর মধ্যে এবি ব্যাংকে কর্মরত রয়েছেন নয় বছর সাত মাস, আর আর্থিক প্রতিষ্ঠান জিএসপি ফাইন্যান্সে কর্মরত ছিলেন এক বছর ১০ মাস। জিএসপি ফাইন্যান্সের পর তিনি কন্টিনেন্টাল হাসপাতালে ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০০২ সালের আগস্ট পর্যন্ত কর্মরত থাকেন। এবি ব্যাংকে ডিএমডি পদে দায়িত্ব পালন করা পর্যন্ত ফজলুর রহমান বিনিয়োগ ব্যাংকিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন। শেয়ার বাজারের ধসের জন্য যে কয়েকটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাতে এবি ব্যাংকও রয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, শেয়ারবাজারে বড় বিনিয়োগকারীদের অন্যতম বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক। শেয়ারবাজার উত্থানের সময় ব্যাংকটির বিনিয়োগ ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান ছিলেন ফজলুর রহমান। শেয়ারবাজারের উত্থান-পতনে ফজলুর রহমানের বড় ধরনের ভূমিকা ছিলো বলে অভিযোগ রয়েছে। সে সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্কতা উপেক্ষা করে তিনি শেয়ারবাজারে ব্যাংকটির বিনিয়োগ বাড়িয়েছিলেন। তাতে ব্যাংকটির সাময়িক মুনাফা বাড়লেও গত বছর আশঙ্কাজনক হারে মুনাফা কমেছে। ২০১০ সালে যেখানে ব্যাংকটির ৩৯৯ কোটি টাকা নিট মুনাফা হয়েছিলো। ২০১১ সালে তা কমে ১৩৩ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
বুধবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকের চেয়ারম্যান বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘শেয়ার বাজারের মন্দার কারণে গত অর্থবছরে আমাদের মুনাফা কমেছে।’