জেলে ‘একা’ লাগে সাকার, সঙ্গী চান এম কে আনোয়ারকে

জেলে ‘একা’ লাগে সাকার, সঙ্গী চান এম কে আনোয়ারকে

একাত্তরে হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্মান্তরে বাধ্য করাসহ ২৩টি অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার পরও ট্রাইব্যুনালে উদ্ভট আচরণ অব্যাহত রেখেছেন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।

বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের পর বিএনপি নেতা এম কে আনোয়ারের বিতর্কিত একটি বক্তব্য প্রসিকিউশন আদালতের গোচরে আনলে তাকেও আটক করতে বলেন সালাউদ্দিন কাদের।

প্রসিকিউটর জেয়াদ আল-মালুম ট্রাইব্যুনালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ারের বিচরুদ্ধে আদালত অবমাননার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেন।

এ নিয়ে আলোচনা হলেও আদালত কড়া কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের।

মালুম ট্রাইব্যুনালকে বলেন, বিচার ব্যাহত করতে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম নিয়ে বেপরোয়া মন্তব্য করেছেন এম কে আনোয়ার এবং তা আদালত অবমাননার সামিল।

তিনটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে তুলেও ধরেন প্রসিকিউটার।

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রমের সমালোচনা করে সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় আনোয়ার বলেন, “ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষীর অনুপস্থিতিতে জবানবন্দি গ্রহণকারী এক পুলিশ কর্মকর্তাকে জেরা করা হয়েছে। এভাবে সাক্ষীর অনুপস্থিতিতে জেরা ও প্রশ্ন করার কোনো বিধান প্রচলিত আইনে নেই। এটা আইনের শাসন নয়, জঙ্গলের শাসনের চেয়েও বড় খারাপ নজির সৃষ্টি হয়েছে বলে আমরা মনে করি।”

সাবেক সরকারি কর্মকর্তা আনোয়ার ঘটনা সম্পর্কে পুরোপুরি জেনেই এ বক্তব্য দিয়েছেন দাবি করে প্রসিকিউটর মালুম বলেন, বিরোধী দলের এই নেতার দূরভিসন্ধি রয়েছে।

তখন ট্রাইব্যুনালপ্রধান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, “মনে হচ্ছে উনি সিআরপিসি এবং সাক্ষ্য আইন মাথা থেকে বের করতে পারছেন না। উনার মতো শিক্ষিত লোকজন যদি এরকম কথা বলেন, তাহলে তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।”

এ সময় কাঠগড়া থেকেই বিচারপতির কথার ফাঁকে ফাঁকে ফোড়ন কাটতে থাকেন সালাউদ্দিন কাদের।

“একদম অশিক্ষিত….. কিচ্ছু জানে না…,” নিজের দলীয় সমহকর্মীর প্রসঙ্গে বলেন তিনি।

এ ধরনের কোনো মন্তব্য করার আগে বিষয়টা বোঝা উচিত মন্তব্য করে নিজামুল হক বলেন, “আমরা কী করতে পারি?”

এ সময় সালাউদ্দিন কাদের বলেন, “জেলে ভরে দেন স্যার, জেলে ভরে দেন। আমার খুব একা লাগে।”

বিচারক বলেন, “মানুষ আইনের সমালোচনা করতে পারে। তবে তারা ট্রাইব্যুনালের নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলতে পারে না।”

তখন সাকা চৌধুরী বলেন, “একদম সত্যি। আপনারা বলছেন, ট্রাইব্যুনালের আইন অনুযায়ী সিআরপিসি ও সাক্ষ্য আইন এখানে গ্রহণযোগ্য নয়। এটা সত্যিই জংলি আইন! কিন্তু জংলি আইন হলেই যে আদালত জংলি হয়ে যাবে-এই কথা শতভাগ সঠিক না।”

যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত এই রাজনীতিকের উদ্ভট কথায় বিচারপতিদেরও হাসতে দেখা যায়। তারপরও তিনি তার কথা চালিয়ে যান।

“আমার বন্ধুদের এই এক বদভ্যাস। দেখেন স্যার, আমার আরেক বন্ধু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত কী বলেছে। (হাতের সংবাদপত্র তুলে ধরে) একটু কাগজটা পড়ে দেখেন স্যার।”

এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, “মিস্টার চৌধুরী আপনি যতই বলেন, আমি কিন্তু এনজয় করি।”

“আমারও খুব ভালো লাগে স্যার, আমারও খুব ভালো লাগে,” উত্তর আসে সালাউদ্দিন কাদেরের।

এ সময় প্রধান বিচারপতি নিজামুল হক এক আদেশ জারি করেন। তাতে বলা হয়, ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম নিয়ে কোনো মন্তব্য করার আগে মানুষ ট্রাইব্যুনাল আইন পড়বে বলে ট্রাইব্যুনাল প্রত্যাশা করে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ারের বিষয়ে বিচারপতি বলেন, এই ব্যক্তি মন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, ডেপুটি কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বিচারপতি নিজামুল হক তার আদেশে বলেন, “এই বক্তব্যের জন্য এম কে আনোয়ারকে অবশ্যই আদালতে তলব করতে হয়। তবে ট্রাইব্যুনাল মনে করে, তিনি ট্রাইব্যুনালের আইন পড়েননি।

“তবে তিনি পড়ে থাকলে আমরা কেবল ‘দুঃখিত’ বলতে পারি।”

সবার সহায়তায় যাতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায় সেজন্য এম কে আনোয়ার এবং তার মতো মানুষরা সহযোগিতা করবেন বলে ট্রাইব্যুনাল প্রত্যাশা করে।

নিজামুল হক বলেন, “এটা অপ্রত্যাশিত। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অ্যাক্টের ১১-এর ৪ ধারার আওতায় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া মতো কিছু এখানে আমরা পাইনি।”

বিচারক কথা শেষ করতে না করতেই সালাউদ্দিন কাদের বলেন, “না না এটা কিন্তু একদম কম হয়ে গেল। ট্রাইব্যুনালের হিসাবে এটা একদম কম হয়ে গেল। এই ব্যাপারে আমি পুরো মালুম সাহেবের পক্ষে ছিলাম।”

পরবর্তীতে ১২ এপ্রিল সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর করা কয়েকটি আবেদনের শুনানির দিন নির্ধারণ করে ট্রাইব্যুনাল।

রাজনীতি