সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের বুরাখালী গ্রামের সবুর মিয়ার দু’চোখে এখন অন্ধকার। ৩ বছর আগে নৌকায় করে দুর্গম পথে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় এসেছিলেন। টানা এক বছর কাটে তার থাইল্যান্ডের গভীর জঙ্গলে।
কুয়ালালামপুরের পিজে এলাকায় একটি নির্মানাধীন ভবনে কাজ করেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বুরাখালি গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী সবুর মিয়া। ৩ বছর আগে আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে যাবার কথা বলে এক দালাল সিলেট শহর থেকে তাকে নিয়ে যায় টেকনাফে। সেখান থেকে চোখ বেঁধে নৌকায় তুলে নিয়ে আসে থাইল্যান্ডে। থাইল্যান্ডের জঙ্গলে এক বছর থাকার পর ২০১৪ সালের প্রথম দিকে দালাল চক্র তাকে নিয়ে আসে মালয়েশিয়া। স্বপ্নের দেশে আসার আগ পর্যন্ত ঘাটে ঘাটে দিতে হয়েছে সাড়ে চার লাখ টাকা। এভাবেই কেটে গেছে সবুর মিয়ার ৩টি বছর। লুকিয়ে অবৈধভাবে কাজ করছেন তিনি। বৈধ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
দেশে টাকা পাঠানো দূরের কথা, নিজের চলার মতো অর্থকড়িও হাতে নেই সবুরের। কেবল সবুর একাই নয়, তার মতো হাজারো বাংলাদেশি এখন অবৈধ শ্রমিক হিসেবে কর্মহীন অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন মালয়েশিয়ায়।
গত দু’বছর ধরে সবুর মিয়া স্বপ্নের দেশে এসেও একটিবারের জন্য ঘুরে দেখতে পারেনি মালয়েশিয়া। এক রকম বন্দি জীবনযাপন করছেন সবুর মিয়া। কারণ তিনি অবৈধ। পুলিশ ধরলে ঘুষ দিয়ে কোনমতে এই দেশে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছেন সবুররা।
পিজে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে সবুর মিয়ার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, দেশে সবাই জানে আমরা কত ভালো আছি। সেটা জেনেই তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটে আসেন এখানে। কেউ সমুদ্র পথে, কেউবা ভুল ভিসায় প্লেনে। অনেকে ছাত্র ভিসায় এসে কাজ করেন হোটেলে ঝাড়ুদার হিসেবে। অনেকে ইঞ্জিনিয়ার বা ডাক্তার ভিসায় এসে কাজ করেন দোকানে দোকানে।
বৈধ কোনো কাগজপত্র না থাকায় সবুর মিয়া মজুরি পান ৩৫ রিঙ্গিত। এর মধ্যে আবার নিয়োগকর্তার সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপনকারীদের দিতে হয় কমিশন।
পিজে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে কথা হয় ইনচার্জ হারুন মিয়ার সঙ্গে। হারুন মিয়া বলেন, সবুর মিয়ার জন্যে খারাপই লাগে। বড় কর্তাকে রাজি করিয়ে সবুর মিয়াকে আমাদের সঙ্গেই একটি শেডে রেখেছি। কুয়ালালামপুর, সেলাংগর, পেনাংসহ মালয়েশিয়ার শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকাগুলোতেও চোখে পড়ে একই চিত্র।
এ বিষয়ে কথা হয় মালয়েশিয়াস্থ জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুনাহর আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, দালাল ও মানবপাচারকারী চক্র সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে বিদেশে পাঠিয়ে তাদেরকে দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।