ঢাকা:
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একগুঁয়েমির কারণে চাহিদা থাকলেও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে প্রবেশ করতে পারছে না দেশের নার্স ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের মত স্বাস্থ্য সহায়ক জনবল। দেশে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও বঞ্চিত হাজার হাজার স্বাস্থ্য সহায়ক কর্মী।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশ্ববিদ্যালয় বা কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে সনদ দেওয়া হলেও বাংলাদেশে দুই জায়গা থেকে সনদ দেওয়ায় বৈষম্যের শিকার কারিগরি বোর্ডের সনদধারীরা। অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন অল্প সংখ্যক সনদধারীই সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন বেশি।
এ অবস্থায় বৈষম্য নিরসন এবং আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে প্রবেশ করাতে স্বাস্থ্য সহায়ক জনবল তৈরির একাডেমিক সনদ দেওয়ার ক্ষমতা এককভাবে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণায়কে সম্প্রতি পাঠানো প্রস্তাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, দেশের ১৬ কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সহায়ক জনবল তৈরির একাডেমিক সনদ দেওয়ার ক্ষমতা এককভাবে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ড বর্হিভূত পাস করা দেশের অন্যান্য সব স্বাস্থ্য সহায়ক জনবলকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক সনদ দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে বলেও প্রস্তাবে উল্লেখ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়েছে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে পাস করা স্বাস্থ্যসেবা সহায়ক জনবলকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত যোগ্য প্রতিষ্ঠান থেকে পেশাজীবী সনদ প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। পেশাগত সনদসহ নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে হেলথ টেকনোলজি কাউন্সিল গঠন করা যেতে পারে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, ডিপ্লোমা ইন হেলথ টেকনোলজি বিষয়ে কারিকুলাম, প্রশিক্ষণ এবং স্বাস্থ্য প্রযুক্তির প্রয়োজনীয় যুগোপযোগীকরণসহ আনুষঙ্গিক উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে একটি জাতীয় প্রফেশনাল বডি গঠন করা যেতে পারে।
“ডিপ্লোমা ইন হেলথ টেকনোলজির একাডেমিক ও প্রশাসনিক সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরিচালকের (হেলথ টেকনোলজি) পদ সৃষ্টি করা যেতে পারে।”
সব সরকারি পলিটেকনিক ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ডিপ্লোমা ইন হেলথ টেকনোলজি কোর্স খোলা যতে পারে বলে প্রস্তাবে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
“উভয় মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে হেলথ টেকনোলজিস্টদের দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের পাশপাশি বিদেশেও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।”
সচিব কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এসব সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি) অশোক কুমার বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, জটিলতা নিরসনে দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রস্তাবগুলো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ড জানায়, বর্তমানে ল্যাবরেটরি, নার্সিং, ফার্মেসি, ডেন্টাল, ফিজিওথেরাপি, ইন্টিগ্রেটেড, রেডিওলোজি অ্যান্ড ইমেজিং কোর্সে স্বাস্থ্য সহায়করা চার বছর মেয়াদে এসএসসি উত্তীর্ণরা ভর্তি হন।
কারিগরি থেকে উত্তীর্ণরা চিকিৎসকদের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা সহায়ক জনবল- ফার্মাসিস্ট, ল্যাব টেকনোলজিস্ট, নার্স ও ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের পাশাপাশি প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন দক্ষ এসব জনবলের বিশাল চাহিদা রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, নার্সিং কাউন্সিল এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে একই ধরনের সিলেবাসে নার্সিং ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা শিক্ষা গ্রহণ করছে। তবে নার্সিং কাউন্সিলের অধীনে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানসমূহ স্ব-উদ্যোগে পরীক্ষা পরিচালনা করে সনদ দেয়। ফলে মান ও গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে ভিন্নতা থাকায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানাবিধ জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।
আর টেকনোলজি এডুকেশন অ্যাক্ট ১৯৬৭’এর ক্ষমতাবলে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড বিভিন্ন ট্রেড ও টেকনোলজিতে পাবলিক পরীক্ষা পরিচালনা করে এসব বিষয়ে সনদ দেয়।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে কারিগরি বোর্ডের অধীনেই নার্সিং ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট শিক্ষা পরিচালিত হয়। এর বাইরে দেওয়া সনদ নিজস্ব গণ্ডিতে প্রযোজ্য হলেও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তা অবমূল্যায়িত হয়ে আসছে।
একই দেশে কারিগরি বোর্ডের সনদধারীরা বঞ্চিত হবে তা কাম্য নয় বলেও মন্তব্য করেন কারিগরি বোর্ড চেয়ারম্যান।
যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (শৃঙ্খলা ও নার্সিং) সুভাষ চন্দ্র সরকার বাংলানিউজকে বলেন, এসব বিষয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।