অটিজম কী?
অটিজম কোন রোগ নয়, মস্তিষ্কের একটি বিকাশজনিত সমস্যা। যার ফলে শিশু অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ ও সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করতে পারে না এবং একই কাজ বা আচরণ বারবার করে থাকে। শিশুর মধ্যে এই সমস্যাগুলো কম বা বেশি মাত্রায় থাকতে পারে।
কখন শুরু হয়?
মস্তিষ্কের প্রাথমিক বিকাশকালীন সময়ে অটিজমের সূচনা হতে পারে। তবে অটিজমের বেশিরভাগ লক্ষণসমূহ সাধারণতঃ ১২ থেকে ১৮ মাস বয়সেই শিশুদের মাঝে সম্পূর্ণ স্পষ্ট হয়ে দেখা দেয়।
সম্ভাবনার কথা
দ্রুত শনাক্তকরণ ও যথাপযোগী ব্যবস্থা নিলে এই শিশুরাও অন্যান্য শিশুদের মত উন্নতি করতে পারে।
অটিজমের বিস্তার কোন পর্যায়ে রয়েছে?
ইউ.এস. সেন্টারফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন এর জরিপ অনুযায়ী প্রতি ৮৮ জন আমেরিকান শিশুর মধ্যে ১ জনের অটিজম আছে এবং প্রতি ৪০ বছরে ১০ গুণ হারে এর বৃদ্ধি ঘটেছে। বাংলাদেশে স্কুলগামী বাচ্চাদের মাঝে ১% অটিজম এ ভুগছে।
কেন অটিজম হয়?
জিনগত(জীবকোষ) পরিবর্তন বা মিউটেশন, বংশগত কারণ, পরিবেশগত প্রভাব- শিশুর মাঝে অটিজম হবার ঝুঁকি সৃষ্টি করে। পিতা-মাতার অধিক বয়স , গর্ভকালীন অবস্থায় মায়ের কোন অসুস্থতা, জন্মলাভের স্বাভাবিক সময়ের অনেক আগেই শিশুর ভুমিষ্ট হওয়া অথবা জন্মকালীন সময়ে অস্বাভাবিক কম ওজন, মস্তিষ্কে কম অক্সিজেন হওয়া, মায়েদের গর্ভকালীন সময়ে বায়ুদূষণ, কীটনাশকের পরোক্ষ সংস্পর্শে আসাও শিশুর অটিজম হওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
অটিজমের জন্য কি টিকাকে (ভ্যাকসিন) দায়ী করা যায়?
গবেষণায় টিকার সঙ্গে অটিজমের কোন প্রত্যক্ষ সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।
কীভাবে বুঝবো অটিজম আছে শিশুর কি না?
• আপনার শিশু যদি ৬ (ছয়)মাসের ভেতর স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে না হাসে।
• ৯ ( নয়)মাসের ভিতর তার চতুর্পাশের যত্নকারীদের কথা, শব্দ, হাসি এবং মুখের ভাবভঙ্গির সাথে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ামূলক আচরণ না করে।
• ১ (এক)বছরের ভেতর মুখে কোন শব্দ না করে, আঙুল দিয়ে কোন কিছু না দেখায়, টাটা না দেয় বা হাত দিয়ে শক্ত করে না ধরে।
• এক বছরের ভেতর কোন ভঙ্গি না করে।
• ১৬ মাসের ভিতর একটি শব্দ না বলে।
• দুই বছরের ভিতর দুইটি শব্দের সংমিশ্রণে ( অনুকরণ বা পুনরাবৃত্তি না করা ) বাক্য না বলে।
• শিশুটির অর্জিত যোগাযোগ দক্ষতা বা সামাজিক দক্ষতা যদি হঠাৎ করে হারিয়ে যায়।
• আলাদা থাকতে পছন্দ করে।
• নাম ডাকলে সারা দেয় না, কখনো কখনো কানে শোনেনা মনে হয়।
• চোখে চোখ রেখে তাকায় না।
• আঙ্গুল দিয়ে পছন্দের কিছু দেখায় না।
• বিভিন্ন জিনিস ঘুরাতে পছন্দ করে।
• একই নিয়মে চলতে পছন্দ করে, কোন পরিবর্তন পছন্দ করে না।
• কিছু কাজ ভাল ভাবে করতে পারে তবে সামাজিক ভাবে উপযুক্ত কাজ গুলো পারে না।
• বড়দের হাত ধরে টেনে নিয়ে প্রয়োজন বোঝায়।
• জড়িয়ে ধরা বা স্পর্শ করা পছন্দ করে না।
• ভয় ও বিপদ বোঝে না। অতিমাত্রায় অস্থির, চঞ্চল অথবা নিষ্ক্রিয়।
• সাধারন শিক্ষা পদ্ধতিতে শিখতে পারে না। যা শুনে হুবহু সেটা বলে।
• বিনা কারনে অতিরিক্ত কান্নাকাটি, মেজাজ/জিদ করা।
• যে কোন জিনিসের প্রতি অস্বাভাবিক আসক্তি।
• অকারণে-অসময়ে হাসি।
• সমবয়সী শিশুদের সাথে মিশতে খেলতে চায় না।
• মিছামিছি খেলতে পারে না।
• ব্যাথা পেলে অনুভব করতে পারেনা বা কাঁদে না।
• অস্বাভাবিক আচরণ করে বা শরীর দোলায়, নাড়াচাড়া করে, হাত নাড়ায় বা লাফায়।
করনীয় : শিশুর মধ্যে সমস্যাগুলো দেখতে পেলে অবশ্যই নিকটস্থ চিকিৎসক /স্বাস্থসেবা কেন্দ্রে যোগাযোগ করুন। অটিজম, দ্রুত শনাক্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।
লেখক: ডা.মো.বেনজামিন, এমডি রেসিডেন্ট(শিশু বিভাগ) বিএসএমএমইউ।
কনটেন্ট ক্রেডিট: মেডিভয়েস