ঢাকা: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক শ্রেণিতে আসন শূন্য থাকার কারণ অনুসন্ধান করে চাহিদার ভিত্তিতে বিষয় খোলা ও শিক্ষার্থী ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।
একই সঙ্গে অতিরিক্ত কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন শূন্য থাকা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রতিবেদনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এমন মতামত এসেছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত ইউজিসির ২০১৫ সালের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন শূন্য ছিল ৫৪২টি।
ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, একজন শিক্ষার্থী কোথায় ভর্তি হবে তা লোকালিটির উপর নির্ভর করবে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীর আবাস, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ইত্যাদির উপর।
বিভিন্ন সময়ের অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে হয়তো অন্য কোনো ভার্সিটিতে চলে গেছে বা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। এ কারণে কিছু আসন শূন্য থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসনের তুলনায় শূন্য থাকা আসন সংখ্যার দিক থেকে বেশি নয় বলে মন্তব্য করেন এই শিক্ষাবিদ।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে ডিসিপ্লিন অফার করে সেগুলোর হয়তো চাহিদা নেই, অবকাঠামোগত সমস্যা- এমন নানা বিষয়ে আসন শূন্য থাকতে পারে বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী।
শিক্ষার্থীদের ভর্তি বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে জানিয়ে রাশেদা কে চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, যেখানে শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্য যুদ্ধ করে সেখানে আসন শূন্য থাকা বাঞ্ছনীয় নয়।
‘অনুসন্ধান করতে হবে, খতিয়ে দেখা দরকার কী কারণে এবং কোন কোন বিষয়ে আসন খালি থাকছে।’
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মধ্যবিত্তরা পড়ে। নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেরা পড়াশোনা করে কারিগরিতে। এজন্য অবকাঠামোগত দিকটাও খেলাল রাখতে হবে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হাজার ৫৮৮টি আসনের বিপরীতে ভর্তি হয় ৪ হাজার ৪১৫ জন, শূন্য আসন ১৭৩টি।
চট্টগ্রামের মতো এতো বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন আসন শূন্য থাকলো- তার কারণ বের করতে হবে; বলেন শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়েও চলে যায়, ফলে কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভর্তি করানো হয়। তবে দ্বিতীয় বছর ভালো জায়গায় চান্স পেয়ে চলে গেলে আর কিছু করার থাকে না।
ইউজিসির প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন শূন্য থাকছে বেশি। এরমধ্যে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০২টি, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৩টি, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৭টি, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬টি, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০টি আসন শূন্য ছিল।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমবর্ষে আসন শূন্য রেখে ক্লাস শুরু করা হয় না। কোনো ছাত্র ভর্তি হয়ে দ্বিতীয়বার মেডিকেলের চান্স পেয়ে চলে গেলে আসন শূন্য হয়। দ্বিতীয় বছর চলে গেলে আর আসন পূর্ণ করা সম্ভব হয় না।
এ অবস্থায় কিছু অতিরিক্ত কিছু অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ।
অবশ্য ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ১৯৫ জন অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর তথ্য এসেছে।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি এবং মওলানা ভাষানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মো. আলাউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমবার্ষে ভর্তি হয়ে অনেকে ভালো জায়গায় চান্স পেয়ে চলে যায়। ফলে আসন পূর্ণ করা সম্ভব হয় না।
‘আমরা আহ্বান করবো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ৫ শতাংশ অতিরিক্ত শিক্ষার্থী যেন ভর্তি করায়’, বলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব আইন অনুযায়ী চলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তারাই সিদ্ধান্ত নেবে। এতে কিছু শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে।