পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার মত ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ অর্থ রয়েছে বীমা কোম্পানিগুলোর হাতে। সম্প্রতি ওই অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) সম্মত হলেও তা বিনিয়োগ হয়নি এখনও।
বীমা আইন অনুযায়ী, জীবন বীমা কোম্পানিগুলোকে লাইফ ফান্ডের ৩০ শতাংশ সরকারি বন্ডে বাধ্যতামূলক বিনিয়োগ করতে হয়। লাইফ ফান্ডের অবশিষ্ট টাকার ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বীমা কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১১ সাল শেষে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লাইফ ফান্ড দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩২৩ কোটি ৯৩ লাখ ২৩ হাজার টাকা। এ টাকা থেকে সরকারি বন্ডে বিনিয়োগের ৩০ শতাংশ অর্থ বাদ দেওয়ার পর যে টাকা থাকবে তার ৩০ শতাংশ বীমা কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে। এ হিসেবে আইনি সীমার মধ্যে বীমা কোম্পানিগুলোর কাছে ৩ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকার উপরে উদ্বৃত্ত রয়েছে। যা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে।
এর মধ্যে বীমা কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে ১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) পক্ষ থেকে বলা হয়, লাইফ ফান্ডের টাকা গ্রাহকের টাকা। তাই এ টাকা ঝুঁকিমুক্তভাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য গত নভেম্বরে এসইসির কাছে ৩ দফা প্রস্তাব দেয় বিআইএ। কিন্তু দীর্ঘদিন পার গেলেও এসইসি এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে বিনিয়োগের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ থেকে দুরে সরে আছে।
এ বিষয়ে বিআইএর চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘আমরা লাইফ ফান্ডের বিনিয়োগযোগ্য টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য এসইসির কাছে একটি প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু এসইসি এ বিষয়ে কিছুই জানায়নি। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও জীবন বীমা কোম্পানিগুলো লাইফ ফান্ডের টাকা পর্যাপ্ত পরিমাণে বিনিয়োগ করতে পারছে না।’
এ বিষয়ে বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ধসের পর বিভিন্ন ফান্ড গঠন করে পুঁজিবাজারে তারল্য সরবরাহ করা হলেও জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর লাইফ ফান্ডের টাকা বিনিয়োগ না হওয়া খুবই দুঃখজনক। এ অর্থ পুঁজিবাজারে সরবরাহ করা হলে তারল্য সরবরাহ অনেকটাই কমে যেত বলে মত তাদের।
২০১১ সাল শেষে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লাইফ ফান্ড দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩২৩ কোটি ৯৩ লাখ ২৩ হাজার টাকা। যা আগের বছর অর্থাৎ ২০১০ সাল শেষে ছিল প্রায় ১৪ হাজার ৭৫৯ কোটি ৯৯ লাখ ১৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ ২০১০ সালের তুলনায় ২০১১ সালে লাইফ ফান্ডের পরিমাণ বেড়েছে ২ হাজার ৫৬৩ কোটি ৯৪ লাখ ১০ হাজার টাকা।
লাইফ ফান্ডে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ডেল্টা লাইফ ২০১১ সালে দেশিয় জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। বছর শেষে প্রতিষ্ঠানটির লাইফ ফান্ড দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৭৩ কোটি ২৩ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। যা এর আগের বছর ছিল ২ হাজার ৩৪ কোটি ৯৪ লাখ ৮১ হাজার টাকা।
২ হাজার ৫২ কোটি ৩ লাখ টাকা নিয়ে এর পরের স্থানেই রয়েছে ন্যাশনাল লাইফ। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটির লাইফ ফান্ডের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৬৩ কোটি ৫ লাখ ১৬ হাজার টাকা। এটিও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি।
এছাড়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে পপুলার লাইফের ফান্ড ১ হাজার ২৬৩ কোটি ৪৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৬২৮ কোটি ৬৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।
ফারইস্টের লাইফ ফান্ড দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৭৩ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। যা আগের বছর অর্থাৎ ২০১০ সালে ছিল ১ হাজার ৩৫২ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার টাকা।
প্রাইমের লাইফ ফান্ড ৩৩৭ কোটি ৮৮ লাখ ৮১ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৫০ কোটি ৬৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। সন্ধানী লাইফের ৬৫৫ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে হয়েছে ৭৫৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
২০১১ সাল শেষে প্র্রোগ্রেসিভ লাইফের লাইফ ফান্ড হয়েছে ২৮৮ কোটি ৩০ লাখ ২১ হাজার টাকা। ২০১০ সালে এর পরিমাণ ছিল ২০০ কোটি ৪০ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। মেঘনা লাইফের লাইফ ফান্ড ৭৪৩ কোটি ৯৪ লাখ ১১ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৯২৩ কোটি ৯৯ লাখ ১৬ হাজার টাকা।
সদ্য শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া পদ্মা ইসলামী লাইফের লাইফ ফান্ডের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩২ কোটি ১৮ লাখ ২৮ হাজার টাকা। যা আগের বছর ছিল ২০৩ কোটি ৭০ লাখ ৮১ হাজার টাকা। রূপালী লাইফের লাইফ ফান্ড ২২৪ কোটি ২৯ লাখ ৬ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৮৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। প্রগতীর লাইফ ফান্ড হয়েছে ২৪৭ কোটি ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। যা আগের বছর ছিল ২১১ কোটি ৯১ লাখ ৭ হাজার টাকা।
অপরদিকে পুঁজিবাজারের বাইরের কোম্পানিগুলোর মধ্যে লাইফ ফান্ডে শীর্ষে রয়েছে হোমল্যান্ড। এ কোম্পানির লাইফ ফান্ড ১৯৫ কোটি ২৮ লাখ ৯৭ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২২২ কোটি ৭৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকা।
এ ছাড়া গোল্ডেনের ৯৮ কোটি ৮৬ লাখ ৭০ হাজার থেকে বেড়ে ১১২ কোটি ৮১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, সানলাইফের ১৮৯ কোটি ১৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ২০০ কোটি ৩৭ লাখ ৩৯ হাজার টাকা, সানফ্লাওয়ার লাইফের ১৩৬ কোটি ৫৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা থেকে ১৫১ কোটি ২ লাখ ৮৩ হাজার টাকা এবং বায়রা লাইফের ৬৮ কোটি ৬৯ লাখ ২১ হাজার টাকা থেকে ৯৬ লাখ ৬১ হাজার ৫৮ হাজার টাকা হয়েছে।
সরকারি জীবন বীমা কোম্পানি জীবন বীমা করপোরেশনের লাইফ ফান্ড ১ হাজার ২৬৭ কোটি ১২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা। একমাত্র বিদেশি বীমা কোম্পানি অমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লাইফ ফান্ড ২০১১ সাল শেষে হয়েছে ৪ হাজার ৪৬৬ কোটি ১১ লাখ ১৩ হাজার টাকা। যা এর আগের বছর ছিল ৩ হাজার ৮১২ কোটি ২৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা।